আচমকাই নোবেলজয়—ভোরে কড়া নাড়া, কারও কাছে ফোনে সুখবর

আলফ্রেড নোবেল
আলফ্রেড নোবেল | ছবি: সংগৃহীত
0

চলছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। এ বছর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবর আচমকাই পৌঁছায় বেশ কয়েকজন বিজয়ীর কাছে। কেউ ভোরের আলো ফোটার আগেই খবরটি পান দরজায় কড়া নাড়ার মাধ্যমে। কেউ আবার ফোনকলের মাধ্যমে জানতে পারেন নোবেল জয়ের খবর।

এ যেন সিনেমার দৃশ্য! রীতিমতো নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে নোবেল জেতার খবর পেয়েছেন বিজয়ীরা। কারও দরজায় ভোরে কড়া নেড়ে জানানো হয়েছে, কেউবা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে পেয়েছেন শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সুখবর।

স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটোগ্রাফার লিন্ডসি ওয়াসন। দরজায় কড়া নাড়তেই এ বছর চিকিৎসায় নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মেরি ই. ব্রাংকোর কুকুর ‘জেলদা’ ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। জেগে ওঠেন তার স্বামী রস কোলকৌন।

নোবেল পাওয়ার খবরে ঘুম জড়ানো চোখে ব্রাংকো বলেন, মজা করো না। কিন্তু সেটাই ছিল বাস্তব। আরও দুই বিজ্ঞানীর সাথে যৌথভাবে নোবেল জিতেছেন তিনি।

নোবেলজয়ী আরেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফ্রেড রামসডেল তখন ব্যাক-প্যাকিং ট্রিপে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে। ফোন ছিল 'এয়ারপ্লেন মোডে'। হঠাৎ তার স্ত্রী চিৎকার করে বলে ওঠেন রামসডেল নোবেল জিতেছেন। স্ত্রীর কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি ফ্রেড রামসডেল।

নোবেলজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফ্রেড রামসডেল বলেন, ‘আমি পাহাড়ে হাঁটছিলাম। আমার ফোন ফ্লাইট মোডে ছিলো। আমার স্ত্রী জানান নোবেল জিতেছি। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে হোটেলে গিয়ে ওয়াই-ফাই সংযোগ করে দেখি খবরটি সত্যি!’

দুই দশকের পুরনো গবেষণায় তারা খুঁজে পেয়েছেন দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া — পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স। যা টাইপ–১ ডায়াবেটিস ও লুপাসের মতো অটোইমিউন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি।

আরও পড়ুন:

অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায় ঘুমাচ্ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী জন মার্টিনিস। সূর্য ওঠার আগেই সাংবাদিকরা হাজির। তার স্ত্রী জিন হাসতে হাসতে বলেন, নোবেল বিজয়ীর নাম জানার জন্য তারা আগে সারা রাত জেগে থাকতেন।

সাংবাদিকদের কথায় তিনিই তার স্বামীকে জাগিয়ে তোলেন। নোবেলের ওয়েবসাইটে লগইন করে নিজের ছবি দেখতে পান জন মার্টিনিস। অন্য দুই বিজ্ঞানীর সাথে কোয়ান্টাম টানেলিং নিয়ে গবেষণাই তাকে এনে দিয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সম্মান।

পদার্থবিজ্ঞানী জন মার্টিনিস বলেন, ‘আমরা আগে রাত জেগে অপেক্ষা করতাম এমন একটি সংবাদের জন্য। পরে মনে হলো এমন পাগলামি না করে ঘুমানো উচিত। ভোরবেলা আমার স্ত্রী ঘুম থেকে জাগিয়ে জানালো নোবেল জিতেছি। স্ত্রীর কথা শুনে নোবেল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি সত্যি জিতেছি।’

রসায়নে নোবেল বিজয়ী জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া প্রথমে ভেবেছিলেন ভোরবেলার ফোনকলটি হয়তো কোনো বিজ্ঞাপন বিক্রেতার। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে একটি বার্তা তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

এভাবেই নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর আচমকাই এসেছে অনেকের জীবনে। নোবেল জয় শুধু অ্যাকাডেমিক নয়, বরং জীবনের এক অবিশ্বাস্য সফলতার গল্প।

ইএ