জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে প্রলয়ঙ্করী হ্যারিকেনের ঝুঁকি!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি | ছবি : সংগৃহীত
0

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ শতাব্দীতে প্রলয়ঙ্করী হ্যারিকেন হওয়ার শঙ্কা আগের সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন বিভাগ। এছাড়া, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ায় হ্যারিকেনের শক্তি ও গতি বেড়েছে বলেও রিপোর্টে জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে, গ্রিনহাউজ গ্যাসের কম নিঃসরণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলেছেন গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

বর্তমান সময়ে বিশ্ববাসীর কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। এর প্রভাবে প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারায় আসছে পরিবর্তন। খরা, অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন ও হ্যারিকেনের মতো প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগগুলো আঘাত হানছে বছরজুড়ে। আর এর মাত্রাও দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন বিভাগের শঙ্কা, যদি তাপমাত্রা দুই ডিগ্রির ঘরে পৌঁছায়, তাহলে স্থলে আঘাত হানা হ্যারিকেনের বাতাসের গতি বাড়বে আরও ১০ গুণ।

সংস্থাটির রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতাব্দীতে ক্যাটাগরি ৪ ও ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার হ্যারিকেন আঘাত হানার শঙ্কা, আগের সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।

সাধারণত হ্যারিকেন সংঘটিত হয় সমুদ্রে। এটি গঠনের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তাপ ও আর্দ্রতার প্রয়োজন পড়ে। সূর্যের তাপ সমুদ্র পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে, ফলে জল হয়ে ওঠে উষ্ণ। আর এটি বাষ্পীভূত হয়ে, পরিণত হয় জলীয় বাষ্পে। আর এটি বেড়ে হলে, ঘনীভূত হয়ে পরিণত হয় মেঘে। এর ফলে সৃষ্ট হয় হ্যারিকেন।

ক্রমাগত সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গ্রানথাম ইন্সিটিটিউটের পরিচালক।

গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক রালফ তুমি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের উষ্ণতা বাড়ছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে আর্দ্রতার পরিমাণ। একারণে হ্যারিকেনের গতি ও ধ্বংসের মাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, হ্যারিকেন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়, তা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক রালফ তুমি বলেন, ‘দুর্যোগের সময় সম্পদের ক্ষতি হবে এটা অনিবার্য। তবে মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিলে প্রাণহানির শঙ্কা কমবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হ্যারিকেনের মৌসুমেও পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চলে বছরের যেকোনো সময় আঘাত হানছে হ্যারিকেন। উত্তর আমেরিকায় সাধারণত বছরের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে হ্যারিকেনের প্রবণতা বেশি থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫১ সালের পর সবচেয়ে বেশি হ্যারিকেন আঘাত হেনেছে ফ্লোরিডায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এসময়ের মধ্যে অঙ্গরাজ্যটিতে ১২০ টিরও বেশি হ্যারিকেন আঘাত হানে।

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউইয়র্ক, বোস্টন, বেইজিং ও টোকিওর মতো শহরগুলো সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

হ্যারিকেন, টাইফুন ও সাইকোলন মূলত সমার্থক শব্দ। স্থানভেদে এগুলোর নাম পরিবর্তিত হয়। সাধারণত অ্যাটলান্টিক মহাসাগর ও পূর্ব উত্তর মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় ১১৯ কি.মি বেগে বাতাস বয়ে গেলে সেটিকে হ্যারিকেন বলে। অন্যদিকে উত্তর পশ্চিম মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে টাইফুন এবং ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলে।

ইএ