কার্টন থেকে বের হচ্ছে ব্র্যান্ড নিউ টেলিভিশন। ঝকঝকে স্ক্রিনে চালু হলো মিউজিক ভিডিও। চোখ আটকে গেলো সনি লেখা জায়গাটায়। স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ ধরে নেবে এটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড সনি'র টেলিভিশন। আদতে এটি সনি ব্র্যান্ডের কোনো টেলিভিশন নয়। শুধু নামটি ব্যবহার করা হয়েছে সনির।
বাজারে এমন প্রচুর টেলিভিশন রয়েছে যেগুলোতে নামিদামি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে বিক্রি করা হচ্ছে দেদারসে। চীন থেকে আমদানি করা এসব টিভির দাম ব্র্যান্ডের তুলনায় কম। তাই অনেক ক্রেতা মারপ্যাঁচ না বুঝে নামি দামি ব্র্যান্ড ভেবেই কিনে নিচ্ছেন এসব পণ্য। এছাড়া হাসপাতাল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক জায়গায় চাহিদা রয়েছে এসব টিভির।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘এই প্রোডাক্টগুলো একটু বেশি চলে। ক্রেতা বলে একটু কম দামের ভিতর ভালো টিভি দেন।’
বিক্রেতাদের আরেকজন বলেন, ‘মানুষ জানে এসব চায়না পণ্য। তাই প্যাকেজে যে নাম থাকে ওই নামেই বিক্রি করছি।’
শুধু কী টেলিভিশন? বৈদ্যুতিক পাখার বাজারেও ক্রেতার সাথে চলে ইঁদুর বিড়াল খেলা। নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো বা নাম কাছাকাছি মিল রেখে তৈরি বৈদ্যুতিক পাখা চোখে পড়ে, যা নকল। আবার কিছু নামি ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক পাখা না থাকার সুযোগে সে নামেই পাখা বের করছেন কেউ কেউ। কিন্তু এসব বোঝার সাধ্য কি ক্রেতার আছে?
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘লাইসেন্স অনুযায়ী সব পণ্য তৈরি হচ্ছে। কেউ বিক্রি করে না বলে আবার কেউ বলে বিক্রি করে।’
একই অবস্থা বৈদ্যুতিক বাতির বাজারেও। নামে বেনামে জ্বলছে বহু বাতি। সড়কের ধারে কোম্পানির প্রচারে কম দামে বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে জনসেবার খবর জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তবে ১০০ ওয়াটের এসব বাল্ব আসলেই ১০০ ওয়াট আলো দেয় কিনা? তা কী ক্রেতার জানা আছে?
দেশে গেলো অর্থবছরেই ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
বিশ্বের ৬৫টি দেশে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। দেশের লাইট, সুইচ, সকেট, হোল্ডার, মাল্টিপ্লাগ, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি পণ্যের অর্ধেকই নকল ও নিম্ন মানের বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার।
চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, ‘চট্টগ্রামে উৎপাদন হলে তো ভালোই আমরা এখানে কার্যকরী ব্যবস্থা নিবো। সারাদেশের যেখানেই উৎপাদন হোক আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’
এদিকে, নিম্নমানের এসব বৈদ্যুতিক পণ্যের কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। তথ্য বলছে, বিগত বছরে ২৭ হাজার ৬২৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সারাদেশে। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮১৩ টি হলো বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে, যা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘নিম্নমানের ওয়্যার থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
দেশে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও বাতির বাজার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার। এ বাজারে নকল পণ্যের রমরমা বাণিজ্য ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।