দেশে এখন
0

নদীবেষ্টিত বরিশালে বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট

নদ-নদীবেষ্টিত হলেও বরিশালে দিন দিন নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। এতে বিভাগজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী। তবে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা গেলে সংকট সমাধান সম্ভব বলছেন বাসিন্দারা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া উচিত। তবে, পানির ঘাটতি পূরণে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সিটি করপোরেশন।

বরিশালকে বলা হয় পানির দেশ। মাকড়শার জালের মতো এই জনপদকে জড়িয়ে রেখেছে নদী-খাল আর জলাশয়।

তবে গেল ৫ থেকে ৬ বছর ধরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। উপরিভাগে পর্যাপ্ত উৎস থাকলেও খাবার পানির জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোবাহান হাওলাদার। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়েও পাচ্ছেন না নলকূপ থেকে এক ফোঁটা পানি।

একই চিত্র নগরীর বিভিন্ন এলাকার নলকূপের। বাধ্য হয়ে অনেককেই ভরসা করতে হচ্ছে কীর্তনখোলার পানির ওপর। এতে নলকূপের বদলে সাবমারসিবল পাম্পে ঝুঁকছেন। অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসিয়ে উত্তোলন করছেন ভূগর্ভস্থ পানি।

এর ফলে সুপেয় পানির স্তর তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। আগে যেখানে বরিশাল নগরে সাড়ে ৭শ' থেকে ৮শ ফুট নিচেই মিলতো বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন প্রায় হাজার ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। এখনই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত বরিশাল নগরে পানির হাহাকার পড়বে।

বরিশাল নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে কোটি টাকা নির্মাণ করা হয়েছিল এরকম দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।

যার নির্মাণ কাজ অনেক আগেই শেষ হলেও চালু হয়নি আজও। বলা হয়েছিল এখান থেকে নগরীর পানির চাহিদা মেটানো হবে। কিন্তু নির্মিত এই প্ল্যান্টের সুফল ভোগ করতে পারছেন না নগরবাসী।

তবে এই প্ল্যান্ট দু'টি চালু করা গেলে নগরবাসীর পানির সংকট দূর হবে বলে মনে করেন পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের এই আহ্বায়ক।

বরিশাল পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন যে পানি সরবরাহ করে থাকে সেটিও খুবই অপ্রতুল এবং এ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হাহাকার তৈরি হচ্ছে। আমাদের এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের দিকে যেতে হবে।’

কালের বিবর্তনে বরিশালের প্রায় ৭০ শতাংশ জলাধারের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। এতে কাজকর্মে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। যে কারণে নামছে পানির স্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তা মহাবিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘প্রতিনিয়ত লবণাক্ত পানি আমাদের এখানে সুপেয় পানিকে দূষিত করছে। ফলে সারফেস ওয়াটারে লবণাক্ততা বাড়ছে। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে খুব শিগগিরই বরিশাল মহানগরীবাসী সুপেয় পানির সংকটে পড়বে।’

বরিশাল মহানগরীতে প্রায় ছয় লক্ষ মানুষের বসবাস। এর বিপরীতে দৈনিক পানির প্রয়োজন ৭ লাখ লিটার। বর্তমানে সিটি করপোরেশন থেকে দৈনিক পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ৩ লাখ লিটার। তবে ঘাটতি পূরণে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কার্যক্রম চালুসহ নানান পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কাওসার বলেন, ‘৭ লাখ লিটার পানিই যেন আমি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ দিতে পারি, এটা হলো আমার টার্গেট। এ টার্গেটকে সামনে নিয়ে আমি এ দুটোকে হাতে নেয়ার চিন্তা করছি। আরো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য যোগাযোগ করবো।’

বরিশাল নগরে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৮-১০ বছর আগেই। পানির চাহিদা মেটাতে নগরের বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকায় ও নগরের রূপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দু'টি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শুরু করা হয়। যা এখনো চালু হয়নি। প্ল্যান্ট দু'টি চালু হলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এএইচ