কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাখ লাখ সিরীয় আজ এক কাতারে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার চোখে-মুখে আনন্দের আলোকছটা। মুখে উল্লাস ধ্বনি। আর পতাকা নাড়িয়ে মেতেছেন নাচে-গানে।
এই উচ্ছ্বাস স্বৈরাচার বাশার আল আসাদের শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তির। স্বৈরাচার আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের ক্ষমতা পতনে আনুষ্ঠানিক এই বিজয় উদ্যাপন। লাখ লাখ মানুষের বিজয় সমাবেশের দৃশ্য আলেপ্পো কেন্দ্রীয় শহর চত্বর সাদুল্লাহ আল-জাবিরি স্কয়ারের। যেখানে অংশ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হতে চেয়েছেন একেকজন সিরীয়।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। তিনি আমাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছেন। তাই বাশার আল আসাদের পতনের পর আলেপ্পোর কেন্দ্রীয় চত্বরে আমাদের উচ্ছ্বাস সমাবেশ।’
একজন সিরিয়ার নাগরিক বলেন, ‘এটি অবশ্যই অবর্ণনীয় এক অনুভূতি। আমরা আসাদ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ায় আনন্দ উদ্যাপনের অপেক্ষা করছিলাম। আমরা এখন স্বাধীন এবং আমরা সিরিয়ার মাথা উঁচু করে রাখব।’
দামেস্কের উমাইয়াদ স্কয়ারেও চোখে পড়ার মতো ছিল বাশার আল-আসাদের পতনের উদ্যাপন। ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা আসাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রথম শুক্রবার ছিলো এই আয়োজন। বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা ওরফে আবু মুহম্মদ আল-জুলানি ঘোষিত সময়েই বিজয় উল্লাসে মাতেন সিরিয়ার মানুষ।
এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি সিরিয়ায় বসবাস করা খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এমনকি আসাদ বিরোধী সুন্নিপন্থী বিদ্রোহীদের বিজয়ে ভয় পাচ্ছেন শিয়াপন্থী বাসিন্দারাও। যদিও সংখ্যালঘুসহ সবার অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম।
সিরিয়ায় বসবাস করা একজন খ্রিষ্টান বলেন, ‘বর্তমান অস্থিরতার মধ্যে এবার দামেস্কে এখনও ক্রিসমাস আয়োজন শুরু হয়নি। অথচ গত বছর এই সময়টা ক্রিসমাস আলোকসজ্জায় ঝলমল ছিলে।’
সংখ্যালঘু ও শিয়াপন্থিদের এমন দুশ্চিন্তার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাসের আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্রোহী পক্ষের বাসিন্দারা। এমন বার্তায় সুন্নি ইসলামপন্থি হায়াত তাহরির আল-শামের আলেপ্পো দখলে যারা শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন তারা আবার ফিরে যাচ্ছেন শহরটিতে। ইতোমধ্যে শিয়া অধ্যুষিত নুবল ও জাহরা থেকে এক লাখের বেশি বাসিন্দা আলেপ্পোতে গেছেন।
আসাদ সরকারের স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির আন্দোলন থেকে ২০১১ সালে থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে গত ২৭ নভেম্বর। এর পর টানা ১২ দিনের অভিযানে দেশ ছেড়ে পরিবার সহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন বাশার আল আসাদ।