বিদেশে এখন
0

দায়িত্ব ছাড়ার আগ পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ব্লিংকেন

কূটনৈতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ধরে রেখে পরবর্তী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে সবধরনের সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দায়িত্ব ছাড়ার আগ পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি।

২০১৩ সালে ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক দপ্তরে কাজ শুরু করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০২১ সালে বাইডেনের মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে গাজা যুদ্ধ, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে কাতারের দোহা- গেল ৪ বছর কূটনৈতিক বলয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন ব্লিংকেন।

২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার জন্য মনোনীত সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। তাই, দায়িত্ব ছাড়ার আগে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মুখ খুলেছেন ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কোনো ধরনের বেগ পেতে হবে না ।

চীন ও কিউবা বিদ্বেষী এবং ইসরাইলের কট্টর সমর্থক ৫৩ বছর বয়সী মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্র দপ্তরের জন্যে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কো রুবিও যেন প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ শুরু করতে পারেন, এমন পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আলোচনা শুরু করেন ব্লিংকেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন বলেন, ‘আগেও বলেছি, নতুন মন্ত্রীকে সর্বোচ্চ সহায়তা করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। দেশ ও মার্কিন প্রশাসনের স্বার্থে সর্বোচ্চটাই করবো। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মার্কো রুবিওর জন্য সবকিছু এমনভাবে রেখে যেতে চাই, যেন উনি প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন।’

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে মার্কিন প্রশাসন সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করছে কী না কিংবা যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পেরেছে এমন প্রশ্নের জাবাবে ব্লিংকেন বলেন, বাইডেন প্রশাসন বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার সক্ষমতার বিচার দেশের মানুষ করবে। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ওয়াশিংটন এখনও পর্যন্ত কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন, ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আলোচনা চালিয়ে যাবেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন বলেন, ‘অন্যকোনো উপায়ে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত থামানো যেতো কী না এখন আর সেটা ভাবার সময় নেই। জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি, গাজা যুদ্ধের অবসান ও উপত্যকাটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। এগুলো পূরণে প্রতিটি মিনিট কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’

ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতে কিয়েভের বিজয় নিশ্চিতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও নতুন মন্ত্রিসভা বর্তমান প্রশাসনের মতো সোচ্চার থাকবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্লিংকেন। তরুণদের যুদ্ধের পাঠানোর বিষয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ব্লিংকেন মনে করেন, প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই কিয়েভ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে ব্লিংকেন বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল সামরিক আইন জারির আগে ওয়াশিংটনকে কোনো তথ্যই দেননি। অচিরেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরিকল্পনা আছে তার। এছাড়া, আলোচনার মাধ্যমে এই রাজনৈতিক কোন্দলের সমাধান সম্ভব বলেও বিশ্বাস করেন ব্লিংকেন।

উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য, বৈরিতায় আচ্ছন্ন ইউরোপ, চীন-উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার চোখ রাঙ্গানি- সব মিলিয়ে ৪ বছরে অনেকগুলো ঝড় সামলেছেন ব্লিংকেন। কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পেরেছেন দিনশেষে তা মূল্যায়নের ভার যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপরই ছেড়ে দিতে চান বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইএ