বিদেশে এখন
0

তিনমাসের ব্যবধানে পদ হারালেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বার্নিয়ার

মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে সরকার প্রধানের পদ হারালেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার। এমপিদের ভোট ছাড়াই বিশেষ ক্ষমতাবলে পার্লামেন্টে বাজেট বিল পাস করানোর পর ৩৩১ জন আইন প্রণেতা অনাস্থা ভোটের পক্ষে রায় দেন। ফ্রান্স সরকারের পতনের পর বামপন্থিরা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর পদত্যাগের দাবি জানালেও ডানপন্থিরা এতে সায় দেয়নি। এ অবস্থায় গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ফ্রান্সের রাজনীতি।

প্রায় ৬২ বছর পর কোনো ফরাসি সরকার প্রধানকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হলো। গেল সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদে মিশেল বার্নিয়ারকে বসিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। তার পদত্যাগের মাধ্যমের বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট। তবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসের আগে নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে না ফ্রান্স।

স্থানীয় সময় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭ সদস্যের নিম্নকক্ষে ৩৩১ জন আইন প্রণেতা অনাস্থা ভোটের পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন। বামপন্থী ও ডানপন্থি জোটের আইন প্রণেতারা পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব এনেছিলেন। ৭৩ বছর বয়সী বার্নিয়ার ফ্রান্সের বর্ষীয়ান একজন রাজনীতিবিদ। ব্রেক্সিট বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন তিনি। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়ে বার্নিয়ার জানান, এতে করে সমস্যা আরও গুরুতর হবে।

ফ্রান্সের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার বলেন, ‘আজকের এই অনাস্থা ভোট ফরাসি রাজনীতিতে আরও সংকট তৈরি করবে। আমি গুরুত্ব দিয়ে বলছি এতে দেশের কোনো উপকার হবে না। আমার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া ফরাসি অর্থনীতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।’

এর আগে বিশেষ ক্ষমতাবলে এমপিদের ভোট ছাড়াই পার্লামেন্টে বিতর্কিত বাজেট বিল পাস করিয়ে তোপের মুখে পড়েন মিশেল বার্নিয়ার। সরকারের ঘাটতি কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে ৬ হাজার কোটি ইউরো কর বাড়ানোর লক্ষ্য নেয়া হয়। পাশাপাশি কমানো হবে সরকারি ব্যয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়, ৬৭ শতাংশ ফরাসি নাগরিক এই বাজেটের বিরোধিতা করেন।

এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বামপন্থী দলের নেতারা। তবে ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ না চেয়ে তাকে চাপে রাখতে চান উগ্র ডানপন্থি নেতা মেরিন লে পেন।

ফার-রাইট ন্যাশনাল র‌্যালির নেতা মেরিন লে পেন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ চাচ্ছি না। তিনি যদি ভোটার, রাজনৈতিক শক্তি ও নির্বাচনের প্রতি সম্মান না দেখান, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে চাপে রাখবো। তিনি একচ্ছত্র ক্ষমতা চান। আবারও ফ্রান্সের ক্ষমতায় বসতে মরিয়া আছেন ম্যাক্রোঁ।’

বামপন্থী দলের সংসদ সদস্য ম্যাথিল্ড প‌্যান্ট বলেন, ‘আমরা এই পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চায়। ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে এখান থেকে অবশ্যই চলে যেতে হবে। ফ্রান্সের জন্য ভিন্ন কিছু করা যে সম্ভব তা আমরা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেবো। এ দেশের জনগণ যে সৌভাগ্যবান তা আমরা প্রমাণ করবো।’

অনাস্থা ভোটে ম্যাক্রোঁ সরকারের হেরে যাওয়ার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। গত নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ২০২৫ সালের বাজেট পাস নিয়েও দেশটিতে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ সময়ে নতুন কেউ এলে তিনিও চাপে থাকবেন বিরোধীদের। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত বার্নিয়ারকে তত্ত্বাবধায়ক ক্ষমতায় রাখতে পারেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।

ইএ