গেল ৫ আগস্ট কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সামনে আসে সংস্কারের বিষয়টি। নির্বাচনের তাগিদও উঠে আসছে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহল থেকে।
সংস্কার নাকি নির্বাচন, কোনটি আগে? এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন অবস্থান থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু সংস্কারের পরই নির্বাচনের প্রত্যাশা অধিকাংশের। সব মিলিয়ে সরকারের সাথে এক হয়ে কাজ করছে খাত ভিত্তিক সংস্কার কমিশনগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনায় উঠে আসে রাজনৈতিক সংস্কার থেকে শুরু করে সংস্কৃতি সংস্কারের প্রস্তাব।
‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যতগুলো কমিশন হয়েছে কিন্তু কোনো সংস্কৃতি কমিশন নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কোনো সংস্কার নাই। একটি নতুন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য যে সংস্কৃতি বিরাজমান সেটা কি যথেষ্ট? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কৃতির পরিবর্তন মানে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো বুঝবে এ অভ্যুত্থান পর দেশ বদলাচ্ছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বায়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের প্রশ্নে যেমন তার কাঠামোর প্রশ্ন আছে, আইনের প্রশ্ন আছে, নতুন বন্দোবস্তে প্রশ্ন আছে। তেমনি সাংস্কৃতিক ভিত্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাংলাদেশ যে বাঙালিত্বের সৃষ্টি হয়েছে তা কলকাতা কেন্দ্রিক, যার সঙ্গে বাঙালি মুসলমান সংযোগ বোধ করেন না। তাই এর বাহিরে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বোধ তৈরির জায়গাটা আমাদের তৈরি করা খুব দরকার।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ করব দিয়ে, ইতিহাসের সঠিক ধারায় সঠিক ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনই কি সকল সমস্যার সমাধান? এমন প্রশ্ন রেখে লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান জানান, স্বৈরাচারদের পুনর্বাসন দূরে থাক গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচার শেষ হওয়ার আগে নির্বাচনে আসতে দেয়া যাবে না বলে মত দেন তিনি।
লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের পুনর্বাসন যদি আমরা না চায়, তাহলে গণতন্ত্রের যে অদ্ভুত সংজ্ঞা যারা দিচ্ছে, যে স্বৈরতান্ত্রিককেও নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে এটা কেমন কথা? যারা গণহত্যার জন্য দায়ী তাদের বিচার করার আগে নির্বাচনে আসতে দেয়ার কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। জনগণের ইচ্ছা বাহিরে কোনো সরকার গঠিত হতে পারে না।’
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। ইসকন নিষিদ্ধের প্রশ্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে তিনি গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে স্বৈরাচার বিরোধীদেরকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার করে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করা নিঃসন্দেহে একটি জটিল কাজ। ইসকনের ব্যাপারে বিষয়টা আমাদের কাছে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত, যা দিয়ে একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, তাই এ মুহূর্তে প্রয়োজন সবাইকে শান্ত থেকে এগুলোকে অনুধাবন করে ধীরে ও সবাই সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার।’
এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না বলে মত দেন বক্তারা।