শিক্ষা
দেশে এখন
0

পটুয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর র‍্যাগিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহিষ্কার ৭

র‍্যাগিংয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের ঘোষণা দিলেও রাতভর র‍্যাগিংয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ৩ শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ৭ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করে তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলে এ ঘটনা ঘটে। এম. কেরামত আলী হলে অবস্থানরত স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪সেশন) সকল শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং দেওয়া হয়। র‍্যাগিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অমানবিক নির্যাতনের কারণে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেননি বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২৩-২৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী জানান, আনুমানিক রাত বারোটায় ইমিডিয়েট সিনিয়ররা আমাদের গণরুমে এসে আমাদের সকলের ফোন জমা নিয়ে একটা টেবিলে রেখে দেন। আমাদেরকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করে এবং এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, বিভিন্ন বাধ্যতামূলক নিয়ম বলে, সিগারেটের ধোয়ায় অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে গণরুমে। এছাড়া আমাদের জানালায় ঝুলানো থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

পরে র‍্যাগিংয়ের খবর পেয়ে এম. কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী প্রক্টর মো. আব্দুর রহিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং গণরুমে ঢুকে র‍্যাগিংয়ের সাথে যুক্ত দুই জনকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরেন এবং ক্যান্টিনে গিয়ে চারজনকে র‍্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত পবিপ্রবি প্রশাসন থেকে পাওয়া বক্তব্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ সেশনের ৭ জন শিক্ষার্থী এ কাজে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন।

পরিস্থিতি অনুযায়ী ৩ জন অসুস্থ শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাদেরকে পবিপ্রবির হেলথ কেয়ারের কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলেন এবং রাতেই পবিপ্রবির অ্যাম্বুলেন্সে করে উক্ত অসুস্থ শিক্ষার্থীদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

র‍্যাগিং মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগত নতুন শিক্ষার্থীদের ওপর পুরোনো বা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের কর্তৃক চালানো একটি নেতিবাচক ও অপ্রীতিকর আচরণ, যেখানে নবাগতদের মানসিকভাবে অথবা শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়। ম্যানার শিখানোর নামে, নবাগত শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর প্রশ্ন করা, অসামাজিক অঙ্গভঙ্গি এবং কখনো কখনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপরে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, ‘র‍্যাগিং বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যর্থ? তারা কি শুধু বলার জন্যেই বলে যাচ্ছেন, প্রভাব বিস্তারে তারা কি অপারগ বা তারা শুধু বলেই যাবেন আর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই র‍্যাগিং নামক ভয়াবহ মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েই চলবে?’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, ‘এ পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। এ ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি যেন পরবর্তীতে আর না ঘটে এজন্য পবিপ্রবি প্রশাসন আরো ও অধিক তৎপর হবে এবং এজন্য সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’

ওই ঘটনায় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপকের ড. কাজী রফিকুল ইসলাম আজ (রোববার, ২৪ নভেম্বর) সকালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়ে সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এএম

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর
No Article Found!