জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভরতা বাড়ানোর পথে হাঁটছে পুরো বিশ্ব। এই অগ্রযাত্রায় বায়ুর গতিশক্তিকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরে দেশে দেশে উইন্ড টারবাইন স্থাপন বা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের আকার বড় হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ উইন্ড টারবাইন উত্তাল সমুদ্রে স্থাপনের কারণে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। এরইমধ্যে পানিতে ডুব দিয়ে নিজে নিজে চলাচলে সক্ষম এআই নির্ভর রোবটও আবিষ্কার করেছে দেশটির একদল গবেষক। যেটি উত্তাল সমুদ্রের অস্বচ্ছ পানিতে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। বর্তমানে সমুদ্রে স্থাপন করা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিদর্শন এবং মেরামত কাজে সহায়তার লক্ষ্যে এই রোবটটির শক্তি সক্ষমতার যাচাই-বাছাই ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কাজ চলছে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে।
যুক্তরাজ্য-স্কটল্যান্ড ফ্রন্টিয়ার রোবোটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোনাটান শারফ উইলনারস বলেন, 'এটি যথাযথ ও নিরাপদ উপায়ে কাজ করছে তা নিশ্চিতে, আমাদের ক্যামেরা সিস্টেমের ছবিগুলোর সাথে রোবটের সমস্ত সেন্সর ডেটা যৌথভাবে কাজ করে।'
যুক্তরাজ্যের সমুদ্রতীরে থাকা উইন্ড টারবাইনের সংখ্যা দুই হাজার ৬০০ এরর বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা চারগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ মূলত বছরে তিনবার টারবাইনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে পর্যবেক্ষণ জরুরি।
যুক্তরাজ্য-স্কটল্যান্ড হেরিওট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ইভান পেটিলট বলেন, 'আমরা এখানে যা তৈরি করছি তা সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত রোবোটিক সমাধান। এই ধরনের চালকবিহীন যানবাহন মোতায়েন করার মাধ্যমে উপকূল থেকে দূরবর্তী এলাকায় থাকা উইন্ড টারবাইন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।'
রোবটের এআই প্রযুক্তি থ্রিডি ক্যাপচারের মাধ্যমে পানির নিচে থাকা উইন্ড টারবাইন অবকাঠামোর সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি সফল হলে তিন সপ্তাহের কাজ তিন ঘণ্টায় সমাধান করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাজ্য জাতীয় রোবটেরিয়াম সেন্টারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডেভিড মরিসন বলেন, 'উইন্ড টারবাইন পরিদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই। তবে এটি অনেক প্রয়োজন। তাই এটি একটি বড় সমস্যা যা আমরা রোবটের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছি।'
২০২৫ সালের শুরুর দিকে এই রোবটটি বাণিজ্যিকভাবে সমুদ্রে পরীক্ষা চালানো হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের হেরিওট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় রোবটেরিয়াম অ্যাকাডেমির যৌথ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।