এক পশলা বৃষ্টি চেয়ে এই প্রার্থনা। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারার সুযোগও যে বিশাল আশীর্বাদ, সেটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পরিস্থিতি। ভয়াবহ বায়ু দূষণের কবলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর তাই ছিল বিশেষ নামাজের ব্যবস্থা।
দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী লাহোর। শুক্রবার রাতেও নগরীর বায়ুমান সূচক ছিল ৭৩৯। প্রশাসনের একের পর এক কঠোর পদক্ষেপেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রাদেশিক ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে পাঞ্জাবের ৬শ'র বেশি মসজিদে সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে কয়েকদিন নফল নামাজ-ই-ইসতিসকায় অংশ নেবেন লাখো মুসল্লি।
মুসল্লিদের একজন বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টি চেয়ে নামাজ পড়েছেন। আমরাও তাঁকে অনুসরণ করে আজ, আগামীকাল এবং সামনের দিনগুলোতে ইসতিসকা নামাজ পড়বো।’
আরেকজন বলেন, ‘আল্লাহ যেন আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং পরিস্থিতি সামলে নেন, সে দোয়া করছি। বিপজ্জনক ধোঁয়াশা এবং মানবজীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে এ নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহর রহমত চাইছি আমরা।’
পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ পাঞ্জাবে প্রতি শীতেই ধোঁয়াশা জেঁকে বসে। কিন্তু নিম্নমানের ডিজেল আর ক্ষেতে আগাছা পোড়ানো ধোঁয়ার কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গেলো কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতির দিকে। ঘন ধোঁয়াশার কারণে লাহোর আর মুলতানে রোববার পর্যন্ত তিনদিন জরুরি পরিস্থিতি ও পূর্ণাঙ্গ লকডাউন জারি করেছে প্রশাসন।
প্রশাসনের একজন বলেন, ‘ধোঁয়ায় আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতাসহ নানা অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। মানুষের সুস্থতা নিশ্চিতে দূষণ কমানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে এবং সংকট সমাধানে সরকারকে অনুরোধ করছি।’
দূষণে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় আরও ১০ দিন প্রদেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে বাড়তি প্রস্তুতি। ঝিলাম শহরে কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে সফল বলে দাবি করেছে সরকার। চলতি বছরের দূষণের জন্য ভারত থেকে আসা বিষাক্ত বাতাসকে দায়ী করেছে পাকিস্তান সরকার এবং বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে ভারতেও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পাঞ্জাব রাজ্য থেকে শুরু করে কয়েকশ' কিলোমিটার ভেতরে রাজধানী দিল্লিতেও বায়ুদূষণ পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতির দিকে। টানা চতুর্থদিন বাতাসের মান গুরুতর থাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত চার চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে দিল্লি। নির্দেশ অমান্যে জরিমানা ২০ হাজার রুপি।
আজ বায়ু মান সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী দিল্লি। শহরের বাতাসে পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ ধাতব কণার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমার চেয়ে ১২০ গুণ বেশি। শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকে যাওয়ার মতো ক্ষুদ্র বলে মানবদেহের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর এটি, দায়ী হৃদরোগসহ প্রাণঘাতী নানা জটিলতার জন্য।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘খুব অস্বস্তি লাগছে। ঘরের ভেতরেও মাস্ক পরে থাকতে হচ্ছে। দূষণের মধ্যে বাইরে বের হওয়ার তো সুযোগই নেই। শ্বাস নিতে পারি না, কাশি বন্ধ হয় না।’
ভারতের দিল্লির নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ড. মুনিশ তানেজা বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়ে এমনই হয়। মৃদু অ্যালার্জি নিয়ে দিল্লি আসা মানুষজন দূষণের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে যান। তাদের নাক, কান, গলায় প্রদাহ আরও বেড়ে যায়। তাই আমি সম্ভব হলে এই সময় তাদের দিল্লির বাইরে গিয়ে থাকার পরামর্শ দিই।’
কার্বন নিঃসরণ, যানবাহন-কলকারখানা আর আগাছা পোড়ানো ধোঁয়ায় বাড়তি মাত্রা যোগ করে শীতের শুরুতে কম তাপমাত্রা আর ভারী বাতাস। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বড় অংশই বর্তমানে বিষাক্ত ধোঁয়াশার কবলে। দিল্লি-লাহোরের পর শনিবার বায়ুদূষণে বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ ঢাকা।