স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

নকল প্রসাধনীর ব্যবহারে দুই যুগে কয়েকগুণ বেড়েছে চর্মরোগ

শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে কসমেটিকসের ব্যবহার বেড়েছে প্রান্তিকেও। তবে বিদেশি পণ্যের জনপ্রিয়তার সুযোগে বাজার সয়লাব হয়ে আছে নকল পণ্য। দেশে মানসম্মত প্রসাধনী উৎপাদিত হলেও অসচেতনতায় নকল পণ্যে ঝুঁকছে অনেকেই। এতে গত দুই যুগে কয়েকগুণ বেড়েছে চর্মরোগ। যদিও নকল পণ্যের উৎপাদন বন্ধে আইনি পদক্ষেপসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে বড় কোম্পানিগুলো।

মাটি দিয়ে রূপচর্চার গল্প ফুরিয়েছে আগেই। ত্বকের যত্নে পানির ব্যবহারও হয়তো হারাবে এ শতাব্দীতে।

বাংলার যেসব গ্রামে এখনও সতেজ মাটি ও পানি। প্রান্তিকের সেসব মানুষের সৌন্দর্য বর্ধনের অনুষঙ্গ কী?

এখন টেলিভিশনের পক্ষ থেকে প্রান্তিকের কয়েকটা গ্রাম ঘুরে বুঝা যায়, কাঁদা মাটি, কাচা হলুদ আর সবুজ মেহেদি পাতার জায়গায় আসা সাবান, শ্যাম্পুও আর একা না। দল ভারি হয়েছে কালার কসমেটিকসের গ্রাম দখলে। সৌন্দর্য বাড়াতে খনিজ উপাদানের নানা ধরন।

গ্রামের একজন বলেন, 'সবাইকে দেখি মেকাপ নেয়, সেখান থেকেই মেকাপ নেয়ার ইচ্ছাটা শুরু হয়েছে। দেশিয় যে মেকার প্রোডাক্টগুলো আছে সেগুলো যদি এখানে পাওয়া যেত তাহলে আর বিদেশ থেকে বা ঢাকা থেকে আনার দরকার ছিল না। আমাদের জন্য সুবিধা হতো।'

তরুণদের ত্বকের যত্নে রঙিন প্রসাধনীর ব্যবহার বাড়ানোটা অবশ্য অভিভাবকদের চিন্তার কারণ নয়, বরং কপালে ভাঁজ নকল প্রসাধনীর দৌরাত্ম্যে।

একজন অভিভাবক বলেন, 'আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন নদী থেকে কাঁকড়া মাটি উঠাতো। সেই কাঁকড়ার মাটি নিয়ে আমরা মাথা, গা, হাত-পায়ে মেখে পুকুর থেকে গোসল করে আসতাম।'

অন্য একতজন অভিভাবক বলেন, 'আমরা এই মাটির ব্যবহার দেখে দেখেই বড় হয়েছি। বড় হওয়ার পর আমরা সেই পাউডারই মাখতাম। এখন দেখি আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঘুম থেকে উঠে মারে ডে ক্রিম, রাতে শোয়ার সশয় মাখে নাইট ক্রিম। সেটা যদি ঠিকমতো পাওয়া না যায়, আসলটা যদি দোকানদাররা না দিয়ে নকলটা দিয়ে দেয় তাহলে লাগানোর সাথে সাথে বলে, আমার মুখ দিয়ে কী বের হলো।'

গ্রাম থেকে শহরে, শুরুতে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষের উঠানে। কড়াইল বস্তির খাদিজাও ঠিকই বাড়িয়েছেন প্রসাধনীর ব্যবহার। তবে জানেন না আসল-নকলের পার্থক্য। তথ্য বলছে, বস্তির ৮০ শতাংশ মানুষই না জেনে নকল প্রসাধনী পণ্য কেনেন। খাদিজার অভিজ্ঞতা কী বলে?

কড়াইল বস্তির খাদিজা প্রসাধনীর ব্যবহার করছেন। ছবি: এখন টিভি

খাদিজা বলেন, 'অনেক সময় পানি পানি হয়ে থাকে। মুখে দিতেই গলে যায়। উপরে লেকা ফেয়ার এন্ড লাভলি এক নম্বর কিন্তু কিনতে গিয়ে দেখি দুই নম্বর। নরমাল জিনিস নিয়ে আসলে মুখে ব্রণ হয়ে যায়, কালো দাগ হয়ে যায়।'

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, কড়াইল বস্তি কিংবা অভিজাত এলাকায় আমরা যেসব প্রসাধনী দেখি তার বেশিরভাগই সরবরাহ হয়ে থাকে রাজধানীর চকবাজার থেকে। চকবাজারে সকল ধরনের প্রসাধনী যেমন মেলে তেমনি অভিযোগ উঠেছে জনপ্রিয় পণ্যের মোড়কের ভেতরে নকল পণ্য সরবরাহের এবং বেচাকেনার।

ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, দুবাই থেকে আমদানি করার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্যও রয়েছে এখানে। আর পুরান ঢাকায় নকল পণ্য তৈরির বিষয়টিও স্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা। জানান, নকল পণ্যের আলাদা দোকানও রয়েছে।

একজন দোকানি বলেন, 'চকবাজার, চকপুরান মার্কেট, মনসুর খান মার্কেটে সব চায়না পণ্য, রকল পণ্য পাওয়া যায়।'

বড় কোম্পানিগুলো বলছে, এসব নকল পণ্য উৎপাদন বন্ধে বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিয়েছে তারা। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, 'আগে যেটা হতো, একটা জায়গায় বড় আকারে ওরা করতো, এখন এটা ছোট ছোট আকারে বিভিন্ন জায়গায় করে। আমরা একটা জায়গায় বন্ধ করে দিলে দেখা যায় আরেকটা জায়গায় করে। সাপ্লাই চেইনটা ব্লক করে দেয়ার চেষ্টা করছি। কনটেইনারটা যেখান থেকে যায় সেটা বন্ধ করে দিলে আমরা দেখি যে ম্যানুফ্যাকচারিংটা বন্ধ হয়ে যায়। সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি কর্মী কাজ করে আমাদের সেলসে। তারা আমাদের ইনফর্ম করে, আমাদের লিগ্যাল টিম আছে, আমরা সাথে সাথে আসলে ব্যবস্থা নেই।'

চিকিৎসকদের মতে, গত দুই যুগে ত্বকের সমস্যা ও চর্মরোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এরজন্য মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন তারা।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া চৌধূরী বলেন, '১৮ বছর ধরে রোগী দেখছি। তখন যতটা না দাগের সমস্যা বা এই চর্মের সমস্যা নিয়ে আসতো এখন তার থেকে অনেক বেশি রোগী এই সমস্যা নিয়ে আসে। মার্কারি কিন্তু একটা ক্ষতিকারক পদার্থ। এটা কিন্তু স্কিন ক্যান্সারের দিকে টার্ন নেয়। আমাদের এখনই বুঝতে হবে, আমাদের এই সচেতনতাটা বৃদ্ধি করতে হবে যে আমার যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে আমি যাবো ডাক্তারের কাছে। পাড়ার দোকানদার বা ওকান থেকে যেকোনো কিছু, যেকোনো ধরনের স্টেরয়েড ক্রিম মুখে মেখে ফেলবো না।'

দেশে উৎপাদিত মানের পণ্যের সহজলভ্যতা বাড়াতে দ্রুত কাজ করার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

এসএস