দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় দেশে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় পাম তেল। নিম্নবিত্ত ও বেকারি শিল্পের চাহিদার প্রায় পুরোটাই এই তেলে পূরণ হয়। সাধারণত পাম ও সয়াবিনের দামে লিটারে পার্থক্য থাকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কিন্তু গত দুই মাস ধরে দফায় দফায় বেড়ে পাম তেল এখন প্রায় সয়াবিন তেলের কাছাকাছি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দুই মাস আগে পাম তেল বিক্রি হয়েছে মনপ্রতি চার হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার ৮০০ টাকায়। যা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ১০০ টাকায়। অর্থাৎ মনে প্রায় এক হাজার ৩০০ টাকা বেড়েছে। পাম তেলের এ দর গত দুই বছরে সর্বোচ্চ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে পাম তেলের বাজার ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। ইন্দোনেশিয়া পাম তেল থেকে বায়োডিজেল তৈরির নতুন কারখানা স্থাপনের কারণে সরবরাহ কমিয়েছে। এ সুযোগে রপ্তানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মালয়েশিয়াও। এ বছর জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ায় পাম তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি টন তিন হাজার ৭০০ রিঙ্গিত, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭০০ রিঙ্গিতে। অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে দর বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, 'সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। মালয়েশিয়া থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়াতে ডিজেলের জন্য ৪০ শতাংশ পণ্য স্টক করবে। এর কারণে সরবরাহটা আরও কমে যাবে। সেজন্য শুল্ক বাড়ছে। বাজারে দাম বাড়ছে।
পাম তেলের দাম বাড়ায় পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করেছে খোলা সয়াবিনের দামও। গত মাসে মনপ্রতি ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া সয়াবিন এখন বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ৩০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগস্ট মাসের পর বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বড় বড় কিছু গ্রুপ তেলের সরবরাহ কমিয়েছে পাইকারি বাজারে।
তেলের ডিও বা পাইকার বিক্রেতা আবদুর রহিম বলেন, 'বিগত সরকারের আমলে যারা বিশেষ করে বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পণ্যটি সরবরাহ করতো তারা এখন সেটি করছে না।'
দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। বিক্রেতারা জানান হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বেকারি শিল্পে ব্যবহার করা হয় পাম তেল। যে কারণে চাহিদাও ভালো। খুচরায় গত মাসে লিটার প্রতি ১৩৪ টাকায় বিক্রি হওয়া পাম তেল এখন প্রতি লিটার ১৬৪ টাকা।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'সোয়াবিনের দাম আগের দামেই আছে। এখনও বাড়েনি। পামের দাম আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকা। এখন সেটা ১৬৪ বা ১৬৫ টাকা চলছে।'
অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'অনেকেই প্রতিনিয়ত আমাদের ডিস্টার্ব করছে যে কেন দাম বেশিতে বিক্রি করছি। আমরা তো কিনে এনে বিক্রি করছি। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। যা করছে সব উপরমহল থেকে করছে। তাদের কাছে গিয়ে ধরতে হবে।'
আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে দুর্গাপূজার কারণে গত মাসে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়তি ছিল, সেটি এ মাসে কমেছে। একইসাথে আগামীর শীত মৌসুমেও পাম তেলের চাহিদা কমে। সে কারণে এক মাসের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে আশা তাদের।