দেশে এখন
0

সংবিধান পুনর্লিখন নয়, প্রয়োজনীয় সংশোধন চায় রাজনৈতিক দলগুলো

৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে- এই সংবিধান এখন কি হবে। যে সংবিধান দেড় দশকে নিজের মতো করে সাজিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক দলগুলো একমত- তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানো এবং প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায়। পুনর্লিখন নয়, দরকার প্রয়োজনীয় সংশোধন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন স্বৈরাচার তৈরি না হতে পারে সেজন্য প্রয়োজন টেকসই সংস্কার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি।

বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায় সুস্পষ্ট ভাবে রয়েছে এই রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হবে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা।

সংবিধানের ২য় ভাগে ৮ এর ১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।

কিন্তু গত দেড়যুগে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের মূলনীতির প্রতিফলন হয়েছে কতটা? কিংবা তারও আগে ক্ষমতার পালাবদলে, সংবিধানের প্রতিস্থাপন, পরিবর্তনে সকল ক্ষমতার উৎস কি জনগণ হতে পেরেছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজের স্বার্থে সংবিধান ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আপনি সংবিধানকে ক্রিটিসাইজ করতে পারবেন, সংবিধানের বিভিন্ন ধারা-উপধারা সম্পর্কে মতামত পেশ করতে পারবেন। কিন্তু এক্সিকিউট করার জন্য হাইয়েস্ট অথিরিটি হচ্ছে পার্লামেন্ট।’

তিনি বলেন, ‘এই আজকে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংবিধান কিন্তু অনেকাংশে দায়ী। কেননা সাংবিধানিক ধারা রক্ষার নামে আপনি যা খুশি করেছেন। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ সংবিধানের দোহাই দিয়ে আমার ভোট কেড়ে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান। সংবিধানের প্রয়োজনে কিন্তু মানুষ না।’

শেখ হাসিনার এমন আচরণে গণঅভ্যুত্থানের পর দাবি উঠেছে সংবিধান সংস্কারের। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোও মোটাদাগে যে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা। এক্ষেত্রে বিএনপির মত- সংবিধান পুনর্লিখন নয়, দরকার প্রয়োজনীয় সংশোধন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারকে সংবিধানে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ৩১ দফায় আমাদের যে প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার আছে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো সংশোধনী লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা প্রমাণিত। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনয়ন করব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট স্থাপন করা হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুনর্লিখন তো প্রয়োজন নেই। পুনর্লিখন একটা ব্যাপক ব্যাপার। পুনর্লিখন কোথায় হয়, যেখানে কোনো সংবিধানই নেই।’

জামায়েত ইসলামীও একই বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেছে, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার হতে না পারে- তাই সংস্কার হতে হবে টেকসই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশা করে তারা যেন প্রয়োজনীয় সংস্কার আনে। বিশেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার। এ সরকার তার শাসনামলের জন্য এটা করবে না। দীর্ঘমেয়াদে যেই আসুক না কেন তারা যেন এ সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারে।’

তুলনামূলক ছোট দলগুলো বলছে, সংস্কারের পাশাপাশি তাদেরকে গুরুত্ব না দেয়ার সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘রাষ্ট্রের ব্যাসিক স্পিরিট বা ফিলোসফিকে ধারণ করে একটা সংবিধান রচিত হবে। যে সংবিধান মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি। রাষ্ট্রের সংবিধান হোক গণমানুষের। যেখানে বাহক রাজনৈতিক দল।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর