পরিষেবা
অর্থনীতি
0

জনবল, লজিস্টিক ও ইঞ্জিন সংকটে মন্থর রেলের গতি

চট্টগ্রাম বিভাগে বন্ধ ২০ স্টেশন

চট্টগ্রাম

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ট্রাফিক স্টাফ বা অপারেশনাল জনবলের অর্ধেকের বেশি পদই শূন্য। লজিস্টিক সাপোর্ট, জনবল ও ইঞ্জিনের সংকটে মন্থর হয়ে যাচ্ছে রেলের গতি। এতে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি রেল স্টেশন। সমস্যা হচ্ছে ট্রেন পরিচালনায়ও।

চলন্ত ট্রেন থেকে হুক কেটে ইঞ্জিন আলাদা করা কিংবা যাত্রার আগে ইঞ্জিনের সাথে বগি সংযোজন, গত পাঁচ বছরে ধরে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যান সোহেল।

ট্রেন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে স্টেশন মাস্টারের প্রধান সহযোগীর ভূমিকায় থাকেন পয়েন্টস ম্যানরা। একটি পয়েন্ট ভুল সেট হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আর তা এড়াতেই স্টেশনমাস্টারের নির্দেশনায় কাজ করছেন সোহেলের মতো অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যানরা। ট্রেন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৪শ' পদের মধ্যে আছেন মাত্র ১শ’ ৫৫ জন।

অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যান সোহেল হাসান বলেন, ‘এখানে কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। হুক কেটে ইঞ্জিন আলাদা করার সময় হাত কেটে যায়।’

প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের ৯৩টি স্টেশন ও চারটি ইয়ার্ডে অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যানরাই অনেক সময় একইসাথে মাস্টার, ফোরম্যান, শান্টিং পোর্টার ও শান্টিং জমাদারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না তারা। ঝুঁকির্পূণ কাজ হলেও কাজে নেই কোন ঝুঁকি ভাতা।

অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যানদের একজন বলেন, ‘আমরা পয়েন্টস ম্যান আমরা শুধু পয়েন্টস বানিয়ে দিবো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের বেশিরভাগ সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হচ্ছে।’

রেলের ট্রাফিক বিভাগে অনুমোদিত ১ হাজার ২৮২টি পদের মধ্যে ৮২৬টি পদই শূন্য। মাত্র এক ভাগ জনবলে চলছে পূর্বাঞ্চল রেল। রেলওয়ের তথ্যানুযায়ী স্টেশন মাস্টারের ২১৬ পদের মধ্যে ১২২টি পদ শূন্য। সহকারী স্টেশন মাস্টারের ১৫১টি পদের মধ্যে নেই অর্ধেক জনবল। প্লাটফর্ম স্টেশনের মাস্টারের ৮টি পদই খালি। এছাড়া, লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা গেইটম্যানের ২শ' পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৪৩ জন। চট্টগ্রামের চারটি ইয়ার্ডে নেই কোনো ইয়ার্ড ফোরম্যান, ইয়ার্ড মাস্টার, শান্টিং পোর্টার বা শান্টিং জমাদার।

এতগুলো পদ খালি থাকার পরেও কীভাবে চলছে রেল? রেলের বিভাগীয় কর্মকর্তা জানান, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় চট্টগ্রাম বিভাগে বন্ধ আছে ২০টি স্টেশন। জনবল ও ইঞ্জিন সংকট চালু করা যাচ্ছে না, নতুন ট্রেন। ফলে ডিজিটাল সিস্টেম অচল হলে ব্যাঘাত ঘটছে ট্রেন পরিচালনায়।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘বন্ধ আছে ২০টি স্টেশন এর মূল কারণ লোকবল সংকট। অনেকদিন ধরে নিয়োগ হচ্ছে না। এছাড়া কক্সবাজার রুটে নুতন ৭ টি স্টেশনে এখনো লোকবল নিয়োগ হয়নি।’

সাম্প্রতিক বছরে কর্তৃপক্ষ প্রায় ৭শ পয়েন্টম্যান নিয়োগ দিলেও পরিশ্রম ও ঝুঁকির কাজ হওয়ায় ২৩৪ জনই কাজে যোগ দেননি। এক্ষেত্রে রেলের চাকা সচল রাখতে অস্থায়ী অভিজ্ঞ পয়েন্টস ম্যানদের চাকরি স্থায়ী করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সিজিপিওয়াইয়ের ইয়ার্ড মাস্টার মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা ৪ জন মাস্টার আছি। আগামী জুনের পর থেকে আমরাও থাকবো না। পয়েন্টস ম্যানদের এই রেল সেবা পরিচালনা করা হচ্ছে যা জুলুমের পর্যায়ে চলে গিয়েছে।’

পদোন্নতি জটিলতা ও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে রেলের এই দুরবস্থা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বলছেন, আউটসোর্সিংয়ের সিদ্ধান্ত থাকায় অস্থায়ী জনবল স্থায়ী করা হচ্ছে না।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের সিদ্ধান্ত থাকায় অস্থায়ী জনবল স্থায়ী করা হচ্ছে না।’

বিশেষায়িত খাত হওয়ায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রেলে জনবল নিয়োগ দেয়া হলে ট্রেন অপারেশনসহ দৈনন্দিন কাজ মারাত্মক ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর