দেশে এখন
0

অভ্যুত্থান পরবর্তী ভারতীয় মিডিয়ার উপস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা

ভারতীয় অনেক গণমাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সামরিক ক্যু কিংবা গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে পটেনশিয়াল এনেমি হিসেবে চিত্রায়িত করাকে তীব্র সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক, লেখক ও গবেষকরা। তারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। গতকাল (শুক্রবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভারতীয় মিডিয়ার পরিবেশনার পর্যালোচনা নিয়ে ‘জুলাই গণপরিসর’ এর আয়োজনে একথা বলেন বক্তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভারতীয় মিডিয়া বা গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা পিছু ছাড়েনি। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে যেখানে বিগত সরকার প্রধান দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সেখানে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার পরিবেশনা আরো সমালোচনা বাড়িয়েছে।

বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভারতীয় মিডিয়ার পরিবেশনার পর্যালোচনা নিয়ে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে পর্যালোচনাধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণঅভ্যুত্থানে পর্যালোচনা প্লাটফর্ম জুলাই গণপরিসর।

ভারতীয় মিডিয়ায় জুলাই অভ্যুত্থান পরিবেশনার ধরন: একটি পর্যালোচনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক ড. সারোয়ার তুষার। মূল প্রবন্ধে ভারতীয় মিডিয়ার পরিবেশনাকে অভ্যুত্থান পূর্ব ও উত্তর দুভাগে তুলে ধরেন তিনি।

লেখক ও গবেষক ড. সারোয়ার তুষার বলেন, ‘ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানকে সামরিক ক্যু হিসেবে তুলে ধরেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে চিত্রায়িত করা হয়েছে পটেনশিয়াল এনেমি হিসেবে।’

শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙাকে রিলিজিয়াস বাইনারি হিসেবে দেখানোকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন এই প্রাবন্ধিক। তার মতে, আগেও ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ইসলামকে দুই পক্ষ হিসেবে হাজির করেছে।

পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় মিডিয়ার আগ্রাসী রূপ দেখা গেছে। কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের নীতিতে দেশটির অনেক গণমাধ্যম বয়ান তৈরি করছে বলে অভিযোগ তাদের।

গবেষক ও শিক্ষক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘ইন্ডিয়ার সাইটই এমন একটা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে দেখার চোখ। আর একটা হচ্ছে বাংলাদেশকে একটা রাষ্ট্র হিসেবে দেখার চোখ।’

সাংবাদিক ও ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ফ্যাক্টচেকাররা বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকাররা ফ্যাক্টচেক করে। বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত করে একদম অপতথ্য হিসেবে এটা প্রমাণিত হয়। কিন্তু আপনি যদি এখনো ওয়েবসাইটগুলোতে যান আগের রিপোর্টগুলো পাবেন।’

চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ পরিবেশনাকে নজর রাখার তাগিদ বিশ্লেষকদের। তারা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষের কোনো সংবাদই ভারতীয় মিডিয়া নিরপেক্ষভাবে প্রচার করে না।

লেখক, গবেষক ও শিক্ষক নাভিন মুর্শিদ বলেন, ‘এই বর্ণণাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। যা বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় করে আসছে গত কয়েকমাস। অন্যদিকে আমাদের থেকে আত্ম প্রতিফলনের জন্য কিছু সময় নিতে হবে।’

ইউল্যাব গণমাধ্যম শিক্ষা ও সাংবাদিকতা অধ্যাপক ড. সুমন রহমান বলেন, ‘এই একটা আজব জায়গা ইন্ডিয়ান মিডিয়ার।’

বক্তৃতায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘ভারতের মিডিয়ার নেতিবাচক খবরের সমালোচনার পাশাপাশি প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগও চালিয়ে যেতে হবে। একপেশেভাবে বিদ্বেষের সুযোগ নেই।’

প্রায় দু'ঘণ্টার বেশি চলা আলোচনা পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নোত্তরে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

এফএস