বিদেশে এখন
0

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে ফিরিয়ে আনতে চান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী?

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফিরিয়ে আনতে চান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী? ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশটির আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতেই কি গাজায় অস্ত্রবিরতি ঠেকিয়ে রেখেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমনটা মনে করছেন না বলে জানালেও এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরেই।

প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার বছর না পেরোতেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- তিন ধর্মেই পবিত্র যে নগরী ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তিচুক্তির পথে অন্যতম বড় বাধা। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমেও সরিয়ে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সসহ ওয়াশিংটনের পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনা, আরব বিশ্বের ক্ষোভ আর মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের জয়জয়কার তুলেছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এরপর পেরিয়েছে প্রায় সাত বছর। ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পালাবদলে বিদায় নিয়েছেন ট্রাম্প; পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মেয়াদ শেষে বিদায়ের পথে। বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আলোচনায় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বিপরীতে ভোটযুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তাপের আঁচ স্পর্শ করেছে মার্কিন রাজনীতিকে।

ইসরাইলের চলমান আগ্রাসনে নরক নেমে এসেছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়। এক বছরে নিহত ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত ৯৭ হাজার। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-শিক্ষা- প্রতিটি মৌলিক চাহিদাই নাগালের বাইরে, এ অবস্থায় যুদ্ধকবলিত ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির বেঁচে থাকাই দায়। দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারেননি বিশ্বনেতারা। উল্টো গাজা থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধি ছুঁয়েছে প্রতিবেশী লেবাননকেও। রক্তপাত ঠেকাতে আর ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরাইলের যুদ্ধনীতিতে লাগাম পড়াতে ব্যর্থতা নির্বাচনের আগে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন রাজনীতিতে।

অস্ট্রেলিয়ার সেন্টার ফর আরব অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ পরিচালক অধ্যাপক কারিমা লাশির বলেন, ‘বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমাদের মনে হচ্ছে যে মধ্যপ্রাচ্যে একটা বিশাল রাজনৈতিক শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে এ শূন্যস্থান নিয়ন্ত্রণ করছে নেতানিয়াহু সরকার। নেতানিয়াহুকে এবং এই বিপজ্জনক অবনতি আটকাতে পারে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও অস্থির।’

হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর পছন্দের বাসিন্দা হিসেবে ট্রাম্প ছিলেন শুরু থেকেই। নির্বাচনী প্রচারণাতেও গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালাকে বারবার আক্রমণ করেছে রিপাবলিকান শিবির। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প না জিতলে ইসরাইলের অস্তিত্ব নির্মূল হবে বলে প্রচারে দাবি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী নিজেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সরাসরি প্রশ্নের মুখে পড়েন বাইডেন, জানান, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর লক্ষ্যেই নেতানিয়াহু গাজায় অস্ত্রবিরতি আটকে রেখেছেন কি না, জানা নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমার চেয়ে বেশি অন্য কোনো প্রশাসন ইসরাইলকে সহযোগিতা করেনি। কেউ না, কেউ না, কেউই না। আমার মনে হয় নেতানিয়াহুর এটা মনে রাখা উচিত। নির্বাচনে তিনি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর আমারও জানা নেই। তবে আমি এ অভিযোগ বিশ্বাস করছি না।’

গাজায় অস্ত্রবিরতির আলোচনায় ইসরাইল প্রধান বাধা নয় বলে কয়েক মাস ধরেই দাবি করছে হোয়াইট হাউজ। ইসরাইল সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্ত্রবিরতি ঠেকিয়ে রেখেছে কি না, সে প্রশ্ন এড়িয়ে আলোচনা সফল না হওয়ার জন্য বারবার গাজার শাসকদল হামাসকে দায়ী করেছে বাইডেন প্রশাসন। আলোচনাজুড়ে বারবার নেতানিয়াহু প্রশাসন অবস্থান বদলে চুক্তি আটকেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে অভিযোগ উঠলেও আমলে নেয়নি ওয়াশিংটন।

কিন্তু দৃশ্যপট ভিন্ন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর কি না নেতানিয়াহুর; বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ইসরাইলের সামরিক সমীকরণ কী দাঁড়াবে- এমন প্রশ্ন কুঁড়ে খাচ্ছে আইনপ্রণেতাদের। এর আগে সেপ্টেম্বরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বেশ ক'জন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেয়ার আগে গাজায় অস্ত্রবিরতি সম্ভব বলে তারা মনে করেন না। কিন্তু এতে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

কানাডার লেখক ও গবেষক, অনুসন্ধানী সাংবাদিক অ্যান্ড্রু মিট্রোভিকা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে ফাটলের খবর আমি বিশ্বাস করি না। এটা অভিনয়। মরীচিকা। এই নেতাদের প্রশ্রয়ে নেতানিয়াহু সংযত হননি, বরং দিন দিন তার সাহস বাড়ছে।’

গেলো মে মাসে বাইডেনের অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনা নেতানিয়াহু সমর্থন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু দ্রুতই তা সঠিক নয় বলে জানান নেতানিয়াহু। গেলো মাসেও চুক্তির ৯০ শতাংশে সম্মতি মিলেছে বলে জানায় বাইডেন প্রশাসন, যা তাৎক্ষণিক খারিজ করেন নেতানিয়াহু। এরপর একই মাসে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই লেবাননেও হামলা শুরু করে ইসরাইল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত যুদ্ধ স্থগিতে মার্কিন প্রশাসনের সকল আহ্বান উপেক্ষা করে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। বিমান হামলা জোরদারের পাশাপাশি লেবাননে স্থল অভিযানও চালাচ্ছে দেশটি।

ওয়াশিংটনের প্রকাশ্য আহ্বান তেলআবিব বারবার উপেক্ষা করে গেলেও সম্পর্কের দৃঢ়তা প্রমাণে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গাজা-লেবাননের পর ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোতে ইসরাইলের হামলার পরিকল্পনায় সমর্থন দেবেন না বলে চলতি সপ্তাহে জানান বাইডেন।

ইএ