বিশ্ব অর্থনীতি
অর্থনীতি
0

৫০ বছরে প্রথমবার কর্মীদের আন্দোলনে বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর

গেল ৫০ বছরের এই প্রথম বন্দরকর্মীদের আন্দোলনের জেরে বন্ধ আছে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের কার্যক্রম। কর্মীদের চুক্তি নবায়ন না করায় মঙ্গলবার, পূর্ব থেকে গালফ উপকূলের অন্তত ৩৬টি বন্দরে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় ইন্টারন্যশনাল লংশোরমেন'স অ্যাসোসিয়েশন, আইএলএ-এর সদস্যরা। আটকে রাখা হয়েছে মেইন থেকে টেক্সাস বন্দরগামী কন্টেইনার জাহাজ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ছুটির মৌসুমে বেচাকেনা শুরু ঠিক আগ মুহূর্তে বন্দরকর্মীদের এই আন্দোলন ও কর্মবিরতির যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।

'চুক্তি নবায়নের আগ পর্যন্ত বন্দরে আর ফিরছি না'- এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাত থেকে বন্দরে বাইরে অবস্থান নেন কর্মীরা। ইন্টারন্যশনাল লংশোরমেন'স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেয়া বন্দর কর্মীদের চুক্তি নবায়নের আল্টিমেটাম পেড়িয়ে গেলে, এদিন ভোর থেকেই কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় টেক্সাস থেকে মেইনের অন্তত ১৪টি বন্দরের কইয়েক ডককর্মীরা।

আন্দোলনরত বন্দরকর্মীদের একজন জানান, আইএলএ বন্দরকর্মীদের মর্যাদা, সম্মান ও সমতার দাবিতে আন্দোলন করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি এনে কঠোর পরিশ্রমী কর্মীদের ছাঁটাই করতে চায়। কর্তৃপক্ষ কর্মী সুরক্ষার দোহাই দিয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে চায়। যদিও তাদের মূল উদ্দেশ্য শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে লাভের পাল্লা ভারি করা।

মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে পরবর্তী আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করে, আগামী ৮০ দিন এই আন্দোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বাইডেন প্রশাসন- এ ধরনের কোনো সমাধানের কথা ভাবছে না।

সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ইউএস ম্যারিটাইম এলায়েন্সন, ইউএসএমএক্স- এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কন্টেইনার থেকে মালামাল সরানোর কাজে নিয়োজিত ২৫ হাজার বন্দরকর্মীর ৬ বছরের একটি চুক্তি নিয়ে কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত। ১৯৭৭ সালে বন্দর শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের পর এই প্রথম একযোগে ৩৬টি বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায়, ইউএসএমএক্স।

একযোগে ৩৬টি বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়েছে ইউএসএমএক্স। ছবি: এখন টিভি

ফার্ম ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে রপ্তানিযোগ্য কৃষিজাত পণ্যের ১৪ শতাংশ আনা নেয়া করা হয় এসব নৌ-বন্দর ব্যবহার করে। আর আমদানি পণ্যের অর্ধেকই এসে জমা হয় পূর্ব ও গালফ উপকূলের বন্দরে। এরমধ্যে কলা ও চকোলেটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বন্দরকর্মীদের কর্মবিরতিতে নড়েচড়ে বসেছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষ করে ছুটির মৌসুম ও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা দেশের জন্য বড় সংকট হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের। বন্দরকর্মীদের দাবি মেনে নেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়- এমন পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হ্যারি কাটজ বলেন, 'দু'টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বন্দরকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনরতদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ নতুন যন্ত্রপাতি এনে কর্মী ছাঁটাইয়ের ছক কষছেন। কর্মীরা কাজের নিরাপত্তা চায়। তাদের দাবি, নতুন যন্ত্রপাতি আনা হলেও, কর্মীদের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। কিংবা যদি কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়, তাদের মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সমঝোতায় আসতে হলে তাদের এই দাবি মানতেই হবে।'

এর আগে, ২০০২ সালে পশ্চিম উপকূলে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বন্দরকর্মীরা। ১১ দিন পর কয়েকটি আন্দোলনরতদের কয়েকটি শর্ত মানার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কর্মীদের ডকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এই মুহূর্তে দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এগিয়ে আসার আহ্বান মার্কিন চেম্বার অব কর্মাসের।

অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের তথ্য বলছে, দেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে চলমান আন্দোলনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রতি সপ্তাহে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া, কর্মীদের দাবি মেনে না নিলে, আরও ১ লাখের কর্মী কর্মবিরতিতে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।