গেল ২২ সেপ্টেম্বর, শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দিনটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশটির মার্ক্সবাদী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের জন্য। গণঅভ্যুত্থানের দু'বছর পর অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার ভার নিতে যাচ্ছেন তিনি। আজ (সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের কথা রয়েছে তার।
১৯৬৮ সালের ২৪ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার থাম্বুথথেগামায় জন্মগ্রহণ করেন দিশানায়েকে। বেড়ে ওঠা কৃষিকাজ নির্ভর মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন সার্ভে ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারি। মা ছিলেন গৃহিণী।
১৯৯৫ সালে ইউনির্ভাসিটি অব কেলানিয়া থেকে ফিজিক্যাল সায়েন্সে ডিগ্রি অর্জন করেন দিশানায়েকে। একই বছর, নির্বাচিত হন সোশ্যালিস্ট স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে। সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকায় ১৯৯৮ সালে জেভিপি'র পলিটব্যুরোর একজন সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
২০০৪ সালে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার সরকারের কৃষি, পশুপালন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান দেশনায়েকে। যদিও পরের বছর দল জেভিপি'র স্বার্থে পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন তিনি।
২০১৪ সালে জেভিপি'র শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন দিশানায়েক। পাঁচ বছর পর অংশ নেন ২০১৯ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। যদিও মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেয়ে বড়সড় ধাক্কা খান দিশানায়েকে।
মার্কসবাদে দীক্ষিত হয়ে ৭০ ও ৮০ এর দশকে পরপর দু'বার বিপ্লবের ডাক দেয় জেভিপি। একপর্যায়ে বিপ্লবের পথ থেকে সরে সংসদীয় গণতন্ত্রের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে দলটি। ২০২২ সালে ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে যে গণঅভ্যুত্থান হয়, সেখানেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে জেভিপি। বিশেষ করে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার- এনপিপি'র সাথে জোট গঠন করে রাজনৈতিকভাবেও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন বাম দল জেভিপি।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও লঙ্কানদের ভবিষ্যৎ এখন অনূঢ়া দিশানায়েকের ওপর। ঋণের বোঝায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধার করতে হলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে তাকে। সাম্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন এই বামপন্থি নেতা, তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন আগামী ৫ বছরে? এখন সেদিকেই তাকিয়ে লঙ্কানরা।