এক প্লেট ভাতের দাম আর কতই বা হবে! তবে তোফাজ্জল কি জানতো এই এক প্লেট ভাত-ই হবে তার জীবনের শেষ খাবার!
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে গণপিটুনিতে নিহত মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেন যেন বুয়েটের শিক্ষার্থী শহীদ আবরারের প্রতিচ্ছবি।
মোবাইল চোর সন্দেহে ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় নির্যাতন চালায় তোফাজ্জলের ওপর। একপর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। তার আগে তাকে খাওয়ানো হয় ডাইনিংয়ের খাবার, পরিবারের কাছে দাবি করা হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে দেশের মানুষ।
মব জাস্টিসের এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় ছয় জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার বিকেলে মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দী দিতে রাজি হন তারা।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানান। এসময় তারা বিচারকের কাছে দায় স্বীকার করে পৃথক পৃথক ভাবে জবানবন্দি দিচ্ছেন। তবে আদালতে, আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত হন নি। আসামিদের জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া; মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া; পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিন সাকিন এবং আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম নামের তিন শিক্ষার্থী। তারা সবাই একই হলের আবাসিক ছাত্র। তাদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক।
মব জাস্টিসের মতো এমন নৃশংস ঘটনা যেন দেশে আর না ঘটে সে জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে বলে বলছেন আইনজীবীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপিঠে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সঠিকভাবে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আইনজীবীরা।