নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পৌর মাঠে প্রতি শনিবার বিকেলে জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের হাট বসে। গেলো বছরের এপ্রিল থেকে জেলার উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও বিক্রির সুবিধায় পৌর মাঠ সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করার অনুমতি দেয় নরসিংদী পৌর কর্তৃপক্ষ।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে থেকে দু’জনকে দেয়া হয় তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব, যাদের কাজ চেয়ার টেবিল ভাড়া এনে অস্থায়ী স্টলের ব্যবস্থাপনা করা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবরিনা সরকার ও আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে স্টল বরাদ্দের নামে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণ উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ডেকোরেটর থেকে মাত্র ১৫০ টাকায় টেবিল ভাড়া করা হলেও তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ জানালে তাকে গ্রুপ থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে এ দুজনের বিরুদ্ধে। এছাড়া বাড়তি স্টল ভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই ছেড়েছেন হাট।
ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘জায়গার কোনো ফি দিতে হয় না, এছাড়াও অন্যান্য কোনো চার্জ নাই। তাহলে এই হিসেবে স্টল ফি অনেক বেশি নেয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে এই হাট ছাড়তে হয়।’
আমরা সব উদ্যোক্তারা চাই টেবিল খরচটা যেন আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকে বলেও জানান আরো একজন ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা।
অস্থায়ী স্টল তৈরিতে টেবিলপ্রতি দেড়শো টাকা নেয়ার কথা জানিয়েছে ডেকোরেটর মালিক। তবে, তার চেয়ে বেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। কিন্তু, কেন বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে নেই যৌক্তিক উত্তর।
ইয়াসিন ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী ইয়াসিন মিয়া ফোন কলে জানান, খরচ সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা রাখা যাবে ।
নরসিংদী নারী উদ্যোক্তা হাট অ্যাডমিন সাবরিনা সরকার বলেন, ‘এখন একটা টেবিলের ভাড়া হচ্ছে ১৬০ টাকা। কিন্তু উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা ফুল টেবিল নিচ্ছে তারা কিন্তু ২৩০ টাকা দিচ্ছে।’
নারী উদ্যোক্তাদের হাটে জনপ্রতি গড় কেনাবেচা দেড় হাজার টাকা। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রতারণা ও বাড়তি টাকা আদায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বাধা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া, কোনো প্রকার ইজারা ছাড়া হাট বসায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। তবে, বর্তমানে পৌরসভার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
নরসিংদী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শ্যামল মিয়া বলেন, ‘যদি খোলা জায়গা হয়, বিশেষ করে ইজারা না নেয়া থাকলে তাহলে সে জায়গা ম্যানেজম্যান্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ইজারা থেকে সরকার যে রাজস্ব পায় সেখান থেকে বঞ্চিত হবে।’
স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ যেহেতু আমরা পায়নি। আমাদের কাছে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ আসে তাহলে প্রথমেই দেখবো যে আমাদের এখানে কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা। সেখানে আমাদের করণীয় আছে কিনা বিধিসম্মতভাবে। তাহলে সেটা আমরা আমাদের পৌরসভার যে আইন আছে এই আলোকেই দেখবো।’
এই হাটে ভাসমান স্টলের সংখ্যা অন্তত একশো। হাটের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। এই মাঠে হাটশুরুর পর থেকে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি যেই টাকা নেয়া হয়েছে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখের কাছাকাছি।