উজানের ঢলে ডোবে ভাটির জনপদ। দুর্দশা বাড়ে বানভাসি মানুষের। সম্প্রতি ভারতের ডমরু বাঁধ খুলে দেয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ ১১ জেলার প্রায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ।
গেল কয়েক দশকে দীর্ঘমেয়াদি এমন বন্যার সাক্ষী হয়নি এ অঞ্চলের মানুষ। ক্ষণস্থায়ী বন্যা রূপ নিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে। পলি বয়ে নিয়ে আসা আশীর্বাদের বান এখন হয়ে উঠছে অভিশাপের নাম।
কিন্তু কেন এই রূপ পরিবর্তন? নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পানি বেড়েছে যে গতিতে কমছে ঠিক উল্টো গতিতে। সংকুচিত হয়েছে বন্যার প্রবাহপথ। অবৈধ দখল আর ভরাটে স্থবির নদী। কমেছে পানি ধারণক্ষমতা। বাড়ছে বিপত্তি।
মহাসচিব, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘ফেনীর বন্যার জন্য মূলত দায়ী মুহুরি নদী। সেখানে আমাদের একটি ব্যারেজ আছে, মুহুরি সেচ প্রকল্প। ব্যারেজের কারণে মুহুরির উজান ও ভাটিতে পলি জমে গেছে, ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে পানি সহজে নামতে পারে নি। এগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের যৌথ নদী কমিশনের যে গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং তারপর যে মেকানিজম গড়ে উঠেছে সেটা যথেষ্ট না। এটা আরো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হওয়া উচিত।’
নদী গবেষকরা বলছেন, ফেনী নদীর মাধ্যমে জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। তবে এবার নদীর উজান অংশ আগে থেকে দখল হওয়ায় পানি সরতে পারেনি।
আর নদী, হাওর, খাল দখলের মতো ঘটনাগুলো দীর্ঘমেয়াদি বন্যার জন্য দায়ী। এ অবস্থার মোকাবিলায় এসব উদ্ধার করার পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ।
আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘বন্যার ইতিহাস নতুন করে লেখা হলে এ উন্নয়নের নামে যে অরাজকতা করা হলো সেটাও কিন্তু লেখা হবে। একই কাজ সারা বাংলাদেশে হয়েছে। কুমিল্লা, নোয়াখালীতে সাড়ে ১১ হাজার আওয়ামী দখলদার রয়েছে। নোয়াখালীর ভৌগোলিক গঠনই এমন। রাস্তা এবং এর পাশে সরকারি খাল। পুকুর আছে, এবং পুকুর ও খালের মধ্যে সংযোগ ছিল। এগুলো সব ধ্বংস করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে ঘর তোলা হয়েছে, খাল দখল করা হয়েছে।
ফেনী-লক্ষ্মীপুরের নদী এলাকা ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাছের ঘের ও পুকুর। এতে রুদ্ধ হয়েছে পানির স্বাভাবিক চলার পথ।
নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবৈধ নদী-খাল দখলকারীর সংখ্যা প্রায় ১১ হাজারের বেশি। এসব ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কখনোই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে মন্তব্য সাবেক এই কর্মকর্তার।
নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নদীগুলোকে, নদীর প্রবাহকে ভারত নিয়ন্ত্রণ করে বা করতে চায়। যাদের ওপর দায়িত্ব তারা যদি টাকার বিনিময়ে দেয়, তাহলে উৎখাত করবেন কীভাবে। আমি কোস্ট গার্ডকে দিয়ে মামলা করিয়েছি, সে মামলা কোথায়। যদি নদ-নদী উদ্ধার করতে হয় তাহলে শক্ত আইন লাগবে।
পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানি নামতে না পারায় নিমজ্জিত জনপদকে রক্ষায় যৌথ নদী কমিশন থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব বিভাগকে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার তাগিদ নদী বিশেষজ্ঞদের।