৫ আগস্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হয় আরেকটি দিন। সকাল থেকেই রাজধানীর প্রগতি স্মরণিতে পুলিশের মারমুখী অবস্থান। ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নিক্ষেপ হয় রাবার বুলেট, যাতে কেউ সড়কে অবস্থান নিতে না পারে।
সেদিন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছিল মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি। কিন্তু রাজধানীর প্রতিটি সড়কে তল্লাশি আর বাধার মুখে পড়েন ছাত্র-জনতা।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'এবার যেহেতু ইতিহাস রচনা করার জন্য নেমেছি সেহেতু সকল বাধা উপেক্ষা করেই এক দফা দাবিতে আমরা যাবো।'
আরেকজন বলেন, 'পুলিশ-বিজিবি আটকাচ্ছে। আমাদেরকে চেক করা হচ্ছে।'
বৃষ্টি কিংবা বুলেট, সব বাধা উপেক্ষা করে দুপুর ১২ টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় জড়ো হন শ'খানেক শিক্ষার্থী। তারা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান কুড়িলের দিকে। খবর আসে উত্তরা থেকে ঢাকা অভিমুখে আসা একটি মিছিল পড়েছে পুলিশি বাধার মুখে। সেই মিছিলটিকে সঙ্গে নিয়ে গণভবন অভিমুখে যাবার সংকল্প নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় গণমানুষের স্রোত।
মুক্তির এ মিছিল বাড্ডা, নর্দা দিতে যত এগিয়ে যেতে থাকে ততো দীর্ঘ হয় সাধারণ মানুষের সারি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা নতুন বাজার গিয়ে থমকে যায়। সামনেই ডিপ্লোমেটিক জোন, সেখানে সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড। কিন্তু থামে না বিক্ষোভের শ্লোগান।
এসময় দূর থেকে সেনা সদস্যরা এগিয়ে যেতে সবুজ সংকেত দেয়। সেনাবাহিনীর ইশারা পেয়ে উল্লাসে উদ্বেলিত হয় ছাত্র-জনতা। ভক্তি-ভালবাসায় হাতটা এগিয়ে দেয় কেউ কেউ। মিছলটি এগিয়ে যায় প্রগতি স্মরণি হয়ে কুড়িলের দিকে।
মানুষের ঢল দেখে ততক্ষণে সরে পড়ে প্রগতি স্মরণিতে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যরা। দুপুর ১টা পর্যন্ত যেখানে থেকে গুলি চালানো হয়, অবশেষে সে এলাকা দখলে নেয় সাধারণ জনতা। এসময় মানব ঢাল তৈরি করে সড়কের দুপাশে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। নিরাপদে পুলিশ সদস্যদের বের করতে পথ তৈরি করে দেয় ছাত্র-জনতা।
মিছিলটি এগিয়ে যায় কুড়িলের দিকে। ততক্ষণে পুরো সড়কে নামে মানুষের ঢল। স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শ্রেণি-পেশা, মত-পথ ভুলে এক হয়ে যায় সবাই।
হঠাৎ খবর আসে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তখন মানুষের গগনবিদারী বিজয়োল্লাস। দোয়া-মোনাজাত আর মুহুর্মুহু স্লোগানে একাকার হয়ে যায় রামপুরার আকাশ বাতাস। সফলতার মুখ দেখে বিপ্লব!