দেশে এখন
0

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা না দিতে চাপ ছিলো চিকিৎসকদের ওপর

চিকিৎসা না দিয়ে শান্তি সমাবেশ করেছেন অনেকেই

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা পেতে পড়তে হয় চরম বিপাকে। উপকণ্ঠের শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়ে। অবহেলায় ঘটে যায় অঙ্গহানি।

মধ্য জুলাই কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কী খুব একটা সহজ ছিল চিকিৎসা নেয়া। সে সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহতদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। অবহেলায় ঘটে অঙ্গহানি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া নিশাত। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলি লাগে মামা আল আমিনেরও। পরবর্তীতে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোষানলে পড়তে হয় এ পরিবারকে। বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা।

আল আমিন বলেন, 'রক্ত পড়ছে আমার ভাগিনার শরীর থেকে। আমরা গেঞ্জি দিয়ে ও হাত দিয়ে চেপে ধরে আছি, হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা দেখেনি।'

শহর ছেড়ে যদি একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখা মেলে একই চিত্র। সাতক্ষীরার নবম শ্রেণীর ছাত্র আলী আহসান। তার পায়ে ছয়টি গুলি লাগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পচন ধরে পায়ে। একপর্যায়ে কাটা পড়ে ডান পা। চোখের সামনে একমাত্র ছেলের এমন করুণ পরিণতি অথৈ সাগরে ভাসিয়েছে দিনমজুর বাবা শাহীন-জোসনা দম্পতিকে।

আলী আহসানের মা জোসনা বেগম বলেন, 'প্রথমে সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ওরা বললো আমরা পারবো না। ওখান থেকে আমার ছেলের কোনো চিকিৎসা হয়নি। ওতোদিন আমার ছেলেটা কষ্ট ভোগ করেছে।'

শুধু সেবা গ্রহীতারাই নয়, সেবা দাতারাও পড়েছেন বিশেষ মহলের রোষানলে। চাইলেও যেতে পরেননি কাতরানো মানুষটার কাছে। সে সময় কোন কোন সুযোগ সন্ধানী দাঁড়িয়েছেন ছাত্র জনতার বিপক্ষেও। তাতে ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসা সেবা।

এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের চাপ দেয়া হয়। বদলির হুমকিসহ তৈরি হয় একাধিক তালিকা।

রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সেবা বাদ দিয়ে শান্তি সমাবেশে গেছেন। এর সাথে সাধারণ নার্সদের হুমকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরও সমাবেশে নিয়ে গেছেন। যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে আসছে তাদের চিকিৎসা না করে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।'

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে হাসপাতালগুলো রূপ নিয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে। যেখানে নিরাপদ ছিলেন না কোন চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী। যার ব্যতিক্রম ছিল না পঙ্গু হাসপাতালও। সেখানে দলীয়করণ বন্ধসহ সেবার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি চিকিৎসকদের।

হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. সাহিদুর রহমান খান বলেন, 'আমরা এর মধ্যে শুধু পেশাদারিত্বই চাই। কোনো রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি চাই না। বারবার আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির বলি হই।'

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। সেইসঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানালেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, 'যথাযথ তদন্ত ওবং তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তবে, সেটা একটু সময় লাগবে। আমরা চাই না কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এটার বলি হোক।'

৯০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তনে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নগরবাসীর দাবি- সেবা নিশ্চিতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাকে করতে হবে বিকেন্দ্রীকরণ।

tech