একটা সময় তার স্পন্সরও ছিলো না। আন্তর্জাতিক মানের জ্যাভলিন তো দূর, এক্কেবারে সাদামাটা স্থানীয় জ্যাভলিন ছিল তাঁর সম্বল। প্যারিস অলিম্পিকে নামা হবে কিনা, তাও ছিল না নিশ্চিত। সেই জ্যাভলিন থ্রোয়ারের বর্শাতেই পাকিস্তানে গেলো প্রথম একক স্বর্ণপদক। আর এতেই তিনি হয়েছেন কোটিপতি। ভারতের নীরাজকে টপকে অলিম্পিকে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জিতেছেন পাকিস্তানের নাদিম।
ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই আলাদা উন্মাদনা। ক্রিকেটের বাইরে এবারের অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের জ্যাভেলিন থ্রো ইভেন্টেও তার দেখা মিলেছে। ভারতের নীরাজ চোপড়া ও পাকিস্তানের আরশাদ নাদিমের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের ফলাফল এবার চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তার হাত ধরে ৪০ বছর পর ব্যক্তিগত ইভেন্টে অলিম্পিকে সোনা জয়ের স্বাদ পেল পাকিস্তান।
লাহোর থেকে প্রায় আড়াইশ' থেকে ৩শ' কিলোমিটার দূরে মিয়া চানু খানেওয়াল গ্রাম থেকে কোনো ক্রীড়াবিদ উঠে আসেনি এর আগে। সবচেয়ে কাছাকাছি এলাকা থেকে উঠে এসেছিলেন পাকিস্তানি পেস কিংবদন্তী ওয়াকার ইউনিস। আরশাদের স্বপ্নও ছিলো তেমনই, বোলিংয়ের গতিও ছিলো শোয়েব আখতারের মতো। তবে বাবার আদেশে চলে গেলেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে।
অলিম্পিক ইতিহাসে অনেক রূপকথা তৈরি হয়েছে। কিন্তু রেকর্ড করা এক চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় নামার জন্য জ্যাভলিন চাইছেন এমনটাও শোনা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যন্ত লিখেছিলেন, জ্যাভলিন দরকার তাঁর। তখন এমনকি নীরজ চোপড়া পর্যন্ত তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, আর্শাদের এই অবহেলা প্রাপ্য নয়। শেষ পর্যন্ত সরকার রাজি হয় তাঁকে নতুন জ্যাভলিন কিনে দিতে।
অনেক চেষ্টা-দরবারের পরে নতুন জ্যাভলিন পেলেও অলিম্পিকের আগেই প্রস্তুতির জন্য প্যারিসে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন আর্শাদ। সেখানে পনেরো দিনের জন্য থাকতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে সেই সুযোগ দেয়নি পাকিস্তান সরকার। যদিও অলিম্পিক যাত্রায় যে ৭ জনের বিমানের টিকিট সরকার থেকে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম।
সব উপেক্ষার জবাব নাদিম দিলেন স্তাদ দি ফ্রান্সে। দুটি সেরা থ্রো ছিল ৯২.৯৭ ও ৯১.৭৯ মিটার। তার পরেই রাতারাতি পাল্টে গেল নাদিমের পৃথিবী। পাকিস্তানে একের পর এক পুরস্কার ঘোষণা হচ্ছে তাঁর নামে।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ সকলেই পুরস্কারের পসড়া নিয়ে বসেছেন। ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ আর্থিক পুরস্কার দেবেন বলেছেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মারিয়াম নেওয়াজ ১শ' মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও করাচির মেয়র ৫০ মিলিয়ন ও সিন্ধুর গভর্নর ২ মিলিয়ন রুপি আর্থিক পুরস্কার দেবেন নাদিমকে।
অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আগেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হিড়িক উঠেছে। নানা বাণিজ্যিক সংস্থা ছুটতে শুরু করেছে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য। সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকা। অথচ সাফল্য ধরা দেবার আগে বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন এই আরশাদ নাদিম।