স্বর্ণের বাজার
বাজার
0

স্বর্ণের বাজারে মন্দাভাব, এক দশকে দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ

অব্যাহত দাম বাড়ায় সারাদেশের মতো বরিশালে স্বর্ণের বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেচাকেনা কম হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। আয় কমে যাওয়ায় পেশা বদলেছেন অনেকে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিয়েসহ সামাজিক নানা ক্ষেত্রেও।

এক দশকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গেল বছরের জুলাইয়ে প্রথমবার লাখ টাকা অতিক্রম করে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম। এ বছর প্রতিভরি স্বর্ণ ১ লাখ ১৭ থেকে ১৯ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। সবশেষ ১ লাখ ২০ হাজার ৮০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। স্বাধীনতার আগের বছর যা ছিল ১৫৪ টাকা।

স্বর্ণের এই উচ্চ মূল্য ইতোমধ্যে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যার প্রভাবে কমেছে মূল্যবান এই ধাতুর বেচাকেনা। বড় ব্যবসায়ীরা কোনোরকম টিকে থাকলেও কাজ না থাকায় এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন ছোট ছোট অনেক স্বর্ণকার।

একজন ক্রেতা বলেন, 'দাম বাড়তে বাড়তে এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের অনেক বাইরে চলে গেছে। খুব বেশিদিন আগেও স্বর্ণের ভরি ৫০ হাজার টাকা ছিল না।'

একজন স্বর্ণকার বলেন, 'আগে যে পরিমাণ কাজ ছিল, এখন তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর কারণে অনেক কারিগর এই কাজ ছেড়ে চলে গেছে। আমরা এখন মুষ্টিমেয় কিছু কারিগর আছি।'

স্বর্ণালংকারের মূল ক্রেতা হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অথচ তাদের একটা বড় অংশের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে স্বর্ণের দাম। এখন উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি স্বর্ণালংকারের মূল ক্রেতা। গত তিন থেকে চার বছরে বরিশালে স্বর্ণালংকার বিক্রি কমেছে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বর্ণের পরিবর্তে উপহার হিসেবে এখন নগদ টাকা দেবার প্রচলন আগের থেকে বেড়েছে।

বরিশাল বাজুসের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, 'বরিশালে এখন স্বর্ণের মন্দাভাব চলছে। আগে যারা বিয়ের জন্য ১০ ভরি স্বর্ণ কিনতো। এখন তারা দুই ভরি স্বর্ণ কেনে।'

বরিশাল বাজুসের সভাপতি শেখ মো. মুসা বলেন, 'মুষ্টিমেয় কয়েকটা দোকান ছাড়া অন্যসব দোকানের খুবই খারাপ অবস্থা। বরিশালের ছোটখাট দোকানগুলোর নুন আনতে পান্তা ফুরায়।'

দাম বেশি বাড়ায় অনেকেরই শখ অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। যার কারণে পারিবারিক কলহের পাশাপাশি বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বরিশালের ম্যারেজ রেজিস্টার ও কাজী আছিউর রহমান ত্বহা বলেন, 'কোনো বিবাহে যদি ৫ লাখ টাকা দেনমোহর হয়, এই স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে উষুল বেশি দেখানো হয়। এউ কারণে সমাজে তালাক পর্যন্ত হচ্ছে।'

সমাজ বিশ্লেষক সাইফুল আহসান বুলবুল বলেন, 'কনে তার প্রত্যাশিত জিনিসটা পাচ্ছে না। অপরদিকে বরপক্ষও দিতে না পারার কারণে লজ্জিত থাকছে। এই জায়গাটা মূলত মর্যাদার জায়গা হিসেবে মূল্যায়ন হতো। এর কারণে পারিবারিক কলহ ও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।'

স্বর্ণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডলার, জ্বালানি তেলসহ বিশ্বের অর্থনীতি। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামান বলেন, 'স্বর্ণ শিল্পকে সাস্টেইনেবল করার জন্য আমাদের দেশ ও বিশ্বে সরকারের একটা আলাদা পলিসি প্রয়োজন।'

বরিশাল বিভাগে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। প্রতিমাসে যেখানে অন্তত ২৪৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে বরিশাল জেলার ৬শ' দোকানে বিক্রি হয় ৪২ কোটি টাকার স্বর্ণ।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর