সিলেটের তাজপুর গ্রামের শফিক মিয়া। প্রবাসে কিছু অর্থ সঞ্চয় করে নিজ গ্রামে ফিরে এসে সবজি ক্ষেত করেছেন। বছর ঘুরতেই অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে। জীর্ণ পাতার মতো মুড়িয়ে গেছে তার স্বপ্ন। মৌসুমি ফসল বিক্রি করতে না পেরে চিন্তা করছেন এই সবজি ব্যবসা ছেড়ে স্থানান্তরিত হওয়ার।
শফিক মিয়া বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করা হয় আবাদের জন্য কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবজি বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না। নিজের থেকে ভতুর্কি দিতে হয়।’
শফিক মিয়ার মতো হাজারো স্থানীয় বাজারের সবজি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এখন তাসের ঘর। অতিবৃষ্টি আর অকাল বন্যা কৃষকদের জন্য হয়ে দাড়িয়েছে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এবার টানা ৩ দফার বন্যায় সিলেট বিভাগে কৃষিখাতেই ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্য নষ্ট হয়েছে যার পরিমাণ ৬০০ কোটিরও বেশি। জীবিকা নির্বাহের শেষ সম্বলটুকু হারিয়েছেন ২ লাখেরও বেশি কৃষক।
স্থানীয় কৃষকদের একজন বলেন, ‘প্রত্যেক বছর বন্যার জন্য লস হচ্ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘পানির কারণে সবজি উত্তোলনেরন অবস্থা নেই।’
সিলেটের প্রধান পাইকারি আড়ৎ সোবহানীঘাট। বন্যার আগে বাজারের চিত্রের সাথে বর্তমান বাজার মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। নেই আগের মতো ভিড়-ব্যাস্ততা। যেখানে সবজি নিয়ে পাশ্ববর্তী জেলা ও দুরদুরান্ত থেকে কয়কশো ট্রাক প্রবেশ করতো সেখানে ট্রাকের আনাগোনা খুবই কম। গ্রামীন বাজার হতে আসা খুচরা, ভ্রাম্যমাণ ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা।
পাইকারি বিক্রেতা বাড়তি দামে কেনার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সিলেট জেলায় চাহিদার তুলনায় সবজির উৎপাদন কম। সবজির জন্য সুনামগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলার ওপর নির্ভর করতে হয় সিলেটকে।এ সংকটে খুচরা বাজারেও সবজির দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। ভোক্তা থেকে খুচরা বিক্রেতা সকলেই রয়েছেন অসহনীয় ভোগান্তিতে।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘কোনো সবজিই ১০০ টাকার নিচে নাই।’
খুচরা বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘সব সবজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পার্থক্য রয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে অতিমাত্রায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিতে স্থানীয় বাজারে প্রভাব, মৌসুমি ও অন্যান্য সবজির বিশাল সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার দীপক কুমার দাস বলেন, আবাদ করা ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে সংকট দেখা দেয়ায় সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে।
বন্যার পর বহুমুখী সংকটে দিন কাটছে সিলেটের মানুষের। তাতে এবার যোগ হয়েছে সবজির তীব্র সংকট। চাহিদা অনুযায়ী সবজির অর্ধেক যোগানও মিলছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই বাজারে দিশেহারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। সকলের দাবী বাজার ব্যবস্থায় আরও জোরালো মনিটরিং এবং কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের।