বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। বিশ্বের সবচেয়ে জনসংখ্যার সাথে শক্তিশালী দক্ষ জনগোষ্ঠীর দেশের সাথে উদীয়মান অর্থনীতির রোল মডেল বাংলাদেশের সম্পর্ক ৫০ বছরে পড়বে আগামী ২০২৫ এ। গেল বছরগুলোতে সম্পর্কের ডানাতেও পালক যোগ হয়েছে বহু।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের বেইজিং সফর। সফরের ১ম দিনে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান ব্যবসায়িক হাব বাংলাদেশের ঝুলিতে ভরলো ৫ হাজার ৭৮২ কোটি টাকার বিনিয়োগ। বেসরকারি খাতের ১৬ টি সমঝোতা স্মারক সই সম্পন্ন হলো বদলে দেয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই।
দেশের মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের সাথে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সাথে ৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় প্রতিষ্ঠানটির।
হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়মন লিন বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ ধরে রাখতে অনেক আন্তরিক। চীন সবসময় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া দক্ষ জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।'
এছাড়া এলএনজি খাতে ২০ মিলিয়ন ডলার, রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ। এককভাবে সর্বোচ্চ পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ নিটল নিলয় গ্রুপ।
বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে নতুন করে ২৮ টি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করেছে। সরকারের ভাবনা আরও দুটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার। সেই সম্ভাবনাতে হাওয়া দিতে চায়না রোড এন্ড ব্রিজ করপোরেশনের সাথে নিংবো সিক্সিনহ কোম্পানির সায়জে কারখানা স্থাপনে ৪০০ মিলিয়নের সমঝোতা স্মারক হয় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
আগামী দিনের ভবিষ্যৎ ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া সমঝোতা হয়েছে লিথিয়াম ব্যাটারি ও ইলেকট্রিক যানবাহনের জন্য।
এইচএসবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মার্ক ওয়ান বললেন, প্রযুক্তির পাশাপাশি আর্থিক খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী তার প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে হুয়াওয়ের তিং লে বললেন বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কথা।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ একটা পরিবর্তিত সময় দিয়ে যাচ্ছে। পরিবহন, অবকাঠামোগত বিনিয়োগের বাইরে চীন আর্থিক খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী।'
বেসরকারি খাতের এই নতুন অংশীদারিত্বের যুগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী। আগামী দিনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রযুক্তি, কৃষি ভিত্তিক খাত, পর্যটন খাতে বিনিয়োগে অংশীদার হয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই লক্ষ্য।
বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, 'কখনো কখনো ভূরাজনৈতিকভাবে আমরা সুবিধা পায়। আবার কখনো কখনো ঝামেলা হয়ে যায়। আস্তে আস্তে বাংলাদেশ ভালো করছে সেই ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে।'
আকিজ আই বস লিমিটেডের সিইও জায়েদ বিন রশীদ বলেন, 'আগামী অর্থবছর থেকে এখানে ভালো সুফল পাওয়া শুরু করবো। কিছু বাঙালি আগে থেকেই এখানে তাদের মাধ্যমে কিছু কথাবার্তা এগিয়ে গেছে।'
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'চীনের সম্পর্কে যতটা জানতে পারবো ততটা ব্যবসা এখানে সম্প্রসারণ হবে।'
সম্মেলনে চীন সরকারের পক্ষ থেকে যোগ দেয় বাংলাদেশের চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন সবচেয়ে সেরা সময়ে রয়েছে।' আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে চীনের বন্ধুত্বের হাত সবসময় শক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এই সফর দেশের বেসরকারি খাতের জন্য সম্ভাবনার পরিপূর্ণ আলো। যে আলোতে আঞ্চলিক ব্যবসায় নেতা হবে বাংলাদেশ।