দেশে এখন

পানির দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি: ওয়াসার স্বেচ্ছাচারিতাকে দুষছেন নগরবিদরা

কখনও চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়া আবার কখনও ময়লা পানি, এমন নানা অভিযোগের মধ্যেই পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আগামী জুলাই থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ১০ শতাংশ হারে বাড়তি দাম গুণতে হবে। এদিকে, দাম বাড়ানোর জন্য ওয়াসার জবাবদিহিতার অভাবকে দুষছেন নগরবিদরা।

গোসল-খাওয়া থেকে শুরু করে রান্না, সবকিছুর জন্য চাই নিরাপদ পানি। তবে নগরবাসীর পানির চাহিদা মিটছে কি? জুরাইনের একটি পরিবারের কথাই ধরা যাক। দৈনন্দিন কাজে ওয়াসার যে পানি তারা ব্যবহার করেন তা ময়লা, দুর্গন্ধে ভরা। পানের অযোগ্য, তবুও মাস শেষে বিল গুণতে হয় ঠিকই।

পরিবারের সিনিয়র সদস্য বলেন, 'আমরা পানিই তো পাই না। ব্যবহার করার জন্য অযোগ্য এই পানি। নিরুপায় হয়ে অনেক কষ্টে ব্যবহার করি।'

এ এলাকার অনেক বাড়িতেই নিত্যদিনের ধোয়ামোছার কাজ ময়লা পানি দিয়েই করতে হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তার ওপর ওয়াসার নতুন করে দাম বাড়ানোর খবর যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমার গরম লাগলেও আমি ফ্যান বন্ধ করে দিতে পারবো। কিন্তু পানি কম ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। পানির দাম বাড়ানো হলে এটা আমার জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। এতে বাড়িভাড়াও বেড়ে যাবে।'

গতকাল (বুধবার, ৩৯ মে) পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে ওয়াসা। সংস্থাটির আইনের ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি এক হাজার লিটার পানি ব্যবহারের জন্য গুনতে হবে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা বর্তমানে আছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। অন্যদিকে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যার বর্তমান মূল্য ৪২ টাকা।

নগরবিদরা বলছেন, জবাবদিহিতা না থাকায় বারবার পানির দাম বাড়াচ্ছে ওয়াসা। বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় সমন্বয় করতে গিয়ে বাড়তি দাম চাপিয়ে দিচ্ছে নগরবাসীর ওপর। পানিকে বাণিজ্যিক পণ্য না করে মান বাড়ানোর দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।

নগরবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, 'প্রকল্প ব্যয় যৌক্তিক না হলে, সমন্বয় করার জন্য বারবার বাড়াতে হয় দাম। পাশাপাশি আমরা যে পানি পাচ্ছি তার গুণগত মান নেই। ওয়াসার মতো কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার অভাব আছে। ঢাকার আশেপাশে নদী, নালা, খালবিলের যদি পানি দূষণ বন্ধ না করা যায়, তখন ওয়াসার পক্ষে আসলে দিন শেষে এ পানির ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে না।'

এদিকে পানির দাম বাড়ানো নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কোনো বক্তব্য। যদিও গণবিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের লক্ষ্যে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।

গতকালের দাম বৃদ্ধি ধরে ২০০৯ সালের পর গত ১৬ বছরে পানির দাম বেড়েছে ১৬ বার। সবশেষ ২০২১ সালের জুলাইয়ে পানি ও পয়ঃসেবা মূল্য ৫ শতাংশ সমন্বয় করেছিল ওয়াসা। ২০২২ সালেও পানির দাম বাড়াতে চেয়েছিল ঢাকা ওয়াসা । কিন্তু তখন বিধি প্রণয়ন না করে পানির দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। এরপর এতোদিন দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর