সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের বাসিন্দা প্রোজেন। তার আয়ের প্রধান উৎস ১১ বিঘার মাছের ঘের। কিছুদিন আগে এই ঘেরে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছের পোনা ছেড়েছিলেন। একমাস পর যে মাছগুলো বিক্রি হতো কয়েক লাখ টাকায়। তবে ঘূর্ণিঝড়ে নদীর বাঁধ ছাপিয়ে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে ঘের। ভেসে গেছে সব মাছ।
তিনি বলেন, '৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আমার ঘেরে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ঘেরে নতুন পোনা মাছ থাকা অবস্থায় ভেসে গিয়েছে।'
তাদের মতোই এই এলাকার শত শত মাছ চাষি একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অতিবৃষ্টির কারণে অল্প গভীরতার ঘেরের বেড়িবাঁধে নেট দিয়ে ঘিরে রেখেও রক্ষা হয়নি অনেক ঘেরের মাছ। সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৬০ হাজার লবণ পানির চিংড়ি ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
চাষিরা বলেন, 'বর্ষার পানির কারণে আমাদের ঘের তলিয়ে গিয়েছে। আমরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি।
আরেকজন বলেন, 'আমি দেড় লক্ষ টাকার মতো ঋণে আছি এইগুলা এখন কীভাবে শোধ করবো বুঝতে পারছি না।'
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন করে আবারও ঘেরে পোনা মাছ ছাড়ছেন অনেকে। চিংড়ি ঘেরের পাশাপাশি এখানকার কাঁকড়া খামারগুলোতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
একজন চাষি বলেন, 'এখান যে মাছ চাষের বেড়িবাঁধ ছিল তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমার ১শ' বিঘার মতো জায়গা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।'
মৎস্য বিভাগ বলছে, শুধু শ্যামনগর উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে আট কোটি টাকা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, 'চিংড়ি পোনা, নরম কাঁকড়া এবং এদের খাঁচাগুলো ভেসে গিয়েছে। সামগ্রিকভাবে ৮ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের প্রতি পরামর্শ তারা যেন নিজের ঘেরে চুন ব্যবহার করে এবং নেট ব্যবহার করে মাছ ঠেকিয়ে রাখে।'
বরিশাল বিভাগে মাছের ঘের আছে সাড়ে ৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে কেবল বরিশাল জেলায় ১০ ভাগের বেশি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোয়াখালী ও ফেনীতে ৬৪ হেক্টর মাছের ঘের ও ১২৯ হেক্টর পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা অঞ্চলে ভেসে গেছে ৫ হাজার ৫শ' ৭৫ হেক্টর মাছের ঘের ও ৩ হাজারের বেশি পুকুর।