কৃষি বৈচিত্র্যের জেলা নাটোর। শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের এই জনপদের বিস্তীর্ণ জমিনে ধান, গম, ভুট্টার পাশাপাশি উৎপাদন হয় সবজিসহ অন্তত ৩৫ ধরনের ফসল। বছরে যার পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ টন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর যেখান থেকে আড়াই লাখ টন খাদ্যশস্য সরবরাহ হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সদর উপজেলার ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক নূর হোসেন। ১৫ শতাংশ জমিতে করেছেন সবজি আবাদ। তবে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ খরচসহ কৃষি উপকরণের দামের সঙ্গে বেড়েছে তার দুশ্চিন্তাও। কারণ এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় দিন দিন ভারী হচ্ছে লোকসানের বোঝা। তাই আগামী বাজেটে কৃষি ও কৃষকের প্রতি নজর দেওয়ার তাগিদ তার।
নূর হোসেন বলেন, 'সার ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের খরচের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সবজির দাম খুবই কম এই কারণে আমাদের লোকসান হচ্ছে।'
কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে একই বিড়ম্বনায় জেলার লক্ষাধিক কৃষক। তাদের দাবি, দুই বছর আগে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার ৮ থেকে ৯শ' টাকার পাওয়া গেলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১২শ' টাকায়। একইভাবে দাম বেড়েছে ডিএপি ও টিএসপি সারেরও।
একজন কৃষক বলেন, 'খরা এবং সবজির দাম নেই। সার, ওষুধ যাবতীয় জিনিসের দাম অনেক।'
তবে ফসল উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়াচ্ছে বীজ ও কীটনাশক। মানসম্মত না হওয়ায় বার বার রোপণ করতে হচ্ছে বীজ দিতে হচ্ছে কীটনাশক। এতে একদিকে দ্বিগুণ হচ্ছে উৎপাদন ব্যয় অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে লোকসানে অনেক কৃষক।
আরেকজন কৃষক বলেন, 'যদি আমরা ভালো মান ও জাতের বীজ পায় তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো। সরকার যে ভর্তুকি দেয় কৃষকে তা আমরা সঠিকভাবে পাচ্ছি না।'
কৃষক নেতারা বলছেন, সরকার সার আমদানিতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেয়, তা অন্য কোন কৃষি উপকরণে দেয় না। তাই আগামী বাজেটে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের কৃষিখাতে ৪০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি তাদের।
নাটোর সমাজতান্ত্রিক খেত মজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সদস্য দেবাশীষ রায় বলেন, 'উৎপাদন খরচ কমাতে হলে সরকারকে অবশ্যই সারের পাশাপাশি এখানে কীটনাশক ও বীজে ভর্তুকি দিতে হবে।'
শুধু নাটোর জেলায় প্রতিবছর সারসহ বিভিন্ন উপকরণে অন্তত ৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। তবে, এ নিয়ে কৃষকদের রয়েছে নানা অভিযোগ। এমন অবস্থায় উত্তরের কৃষি ও কৃষককে এগিয়ে নিতে বিশেষ কৃষি অঞ্চল ঘোষণা করে আসন্ন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি সংশ্লিষ্টদের।