সুতার মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং তাঁতির হাতের নিখুঁত বুননে তৈরি টাঙ্গাইলের জামদানির খ্যাতি দেশে-বিদেশে। যমুনা-ধলেশ্বরীর জলে ধোয়া সুতা, শাড়ির পাড়ের নকশায় বৈচিত্র্য, বুননে দেশীয় ঐতিহ্যের ছাপ ও গুণগত মানের বিচারে এই শাড়ি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম দাবিদার ছিল। তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিবাদ শুরু হয়। টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়িকে নিজেদের বলে স্বীকৃতি দিয়ে জিআই অন্তর্ভুক্ত করে ভারত। এরপর বিতর্কের পালে হাওয়া লাগে। দুই দেশের মানুষের আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জার্নালে প্রকাশ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।
টাঙ্গাইল শাড়ির পরে রংপুরের হাড়িভাঙা আম, মৌলভীবাজারের আগর আতর এবং মুক্তাগাছার মণ্ডাকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি দেওয়ায় দেশে জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টি। সাধারণত জিআই স্বীকৃতি পেতে ওই অঞ্চলের কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে ডিপিডিটি বরাবর আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে পণ্যের গুণগত মান বজায় ও অন্যান্য বিষয়ের দেখভাল করেন জেলা প্রশাসক বা সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা। আজ (বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল) রাজধানীতে ১৪টি জিআই পণ্যের সনদ বিতরণের আয়োজন করে ডিপিডিটি।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর গুণগত মান রক্ষার পাশাপাশি সেগুলো বাজারজাতকরণে সঠিক পথে হাঁটতে হবে। আর ভারতের সঙ্গে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মীমাংসা হবে।’
২০১৩ সালে বাংলাদেশ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত পণ্যের সংখ্যা হাতেগোনা। ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, ‘সম্ভাবনাময় এই খাতকে এগিয়ে নিতে শিগগিরই আরও ৫০০ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি দিতে কাজ চলছে।’
আর জিআই পণ্য রপ্তানিতেও বাংলাদেশের নেই উল্লেখযোগ্য সফলতা। উল্টো জিআই পণ্যের বাণিজ্যিক হলমার্ক ও ট্যাগ জটিলতায় ভোগেন ব্যবসায়ীরা। তাদের সুবিধা দিতে শিগগিরই জিআই পণ্যে ট্যাগ-লোগোর ব্যবস্থার কথা জানান শিল্পমন্ত্রী।
জিআই পণ্যের বাজারজাতে প্রচারণায় ঘাটতির কথাও স্বীকার করেন শিল্পমন্ত্রী। সংকট উত্তরণে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস, বিমানবন্দর ও দেশীয় মেলার মাধ্যমে প্রসার বাড়ানোর আহ্বান জানান।