দেশে এখন
পরিবেশ ও জলবায়ু
0

বাড়ছে তাপপ্রবাহ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অগ্রগতি কতটা?

সূর্যের উত্তাপ আর প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট জনজীবন। বনভূমি উজাড় করে নগরায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পাশাপাশি নানা কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবিরাম যেন আগুন ঝরছে। চৈত্রের শেষ থেকে নির্দয় সূর্যের উত্তাপে পুড়ছে প্রকৃতি। প্রায় পানিশূন্য যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বুকজুড়ে পানি প্রবাহের বদলে এখন বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় এই গরম থেকে বাঁচতে শীতল বাতাস আর বৃষ্টির আশায় চাতক প্রতীক্ষায় থাকা সাধারণের জন্য আপাতত মিলছে না কোনো সুখবর।

বগুড়ার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, 'আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে তাপদাহ অব্যাহত থাকবে বলে আমরা মনে করছি।'

দিনকে দিন কেন রুদ্ররূপ ধারণ করছে প্রকৃতি। তীব্র তাপপ্রবাহের সময়ে এটিই এখন বড় প্রশ্ন। ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক কারণে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তাপপ্রবাহের অস্বস্তিকর অনুভূতির কারণ শুধুই প্রাকৃতিক নয়, বলছেন পরিবেশবিদরা।

সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই বলেন, 'সবগুলো গাড়ি জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এবং শিল্পকারখানাগুলো থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যার ফলে তীব্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।'

শিল্প-কারখানা, যানবাহনের পাশাপাশি কৃষিতে সেচ কাজেও কমছে না জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। দেশে ৩.৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সেচ কাজে ব্যবহৃত হয় প্রায় ১২ লাখ ডিজেল চালিত সেচ পাম্প। যেখান থেকে নির্গত হয় অন্তত ১০ লাখ টনেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড। পাশাপাশি বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প রয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার।

অথচ সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প পথে হাঁটার সুযোগ থাকলেও সেপথে তেমন অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি চরাঞ্চলে সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য সৌরশক্তি চালিত পোর্টেবল ইরিগেশন সিস্টেম চালু করে সুফল পেয়েছে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির চর ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার। পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতিতে সেচ দিয়ে প্রতি একরে কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে সাত হাজার টাকা।

বগুড়ার আরডিএ'র সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের পরিচালক ফেরদৌস হোসেন খান বলেন, 'ডিজেল পাম্পগুলোর বিকল্প হিসেবে কিভাবে সোলারে যাওয়া যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। এতে অনেকাংশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবো।'

আরডিএ'র চর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারর পরিচালক ড. মো. আব্দুল মজিদ প্রামাণিক বলেন, 'সোলার সেচ ব্যবহার করে আমরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারছি এবং আমাদের যে আর্থিক বিষয় থাকে তাতে ৭৫ শতাংশ সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।'

ভর্তুকি মূল্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-স্রেডা'র সৌরচালিত সেচপাম্প নিয়ে উপকৃত হয়েছেন বগুড়া সদরের চক সর্তার কৃষক কামরুজ্জামান। ৩০ বিঘা জমিতে সেচের পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করা সম্ভব হবে।

গাছ-গাছালি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে ভূমিকা রাখলেও দেশে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বনভূমি। একইসাথে বাড়ছে নগরায়ন। তৈরি হচ্ছে ইট, কাঠ ও পাথরে মিশ্রিত কংক্রিটের দালান-কোঠা। কংক্রিট দ্রুত তাপ শোষণ আর ধীরগতিতে নিঃসরণ করায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে এসব বহুতল ভবন।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর