পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যা যা দরকার তার সবই আছে মৌলভীবাজারে। কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, সবুজ চা বাগান, রাবার বাগানসহ নানা আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে এ জেলায়। ঋতু ভেদে এসব অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভিন্নরূপ ধারণ করায় সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ঘেরা নান্দনিক এসব জায়গায়।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে পর্যটকের সংখ্যা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই খাতের সঙ্গে জড়িতরা। জেলার নন্দিত পর্যটনকেন্দ্র লাউয়াছড়া উদ্যান। প্রতিবছর যেখানে গড়ে দুই লাখ দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সাত মাসে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৬৮ হাজার ৩৮০ জন। গেলো বছরের তুলনায় যা ৩৮ শতাংশ কম। পর্যটক কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের হোটেল-রিসোর্টেও।
শ্রীমঙ্গলের নিরব ইকো রিসোর্ট। ছবি: এখন টিভি
নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট । শ্রীমঙ্গলে একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত এ রিসোর্টে কয়েকমাস ধরে নেই কাঙ্ক্ষিত পর্যটক। যাতে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি উদ্যোক্তার।
শ্রীমঙ্গল নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী শামসুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের শ্রীমঙ্গলে প্রায় শতাধিক রিসোর্ট আছে। ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। একেক জনের একেক রকম ক্ষতি। আমার রিসোর্ট এটা খুবই ছোট পরিসরে করা। কোনো মাসে দেখা যায় কর্মচারীর বেতনও উঠছে না।'
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজারের প্রায় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস থাকতো শতভাগ অগ্রিম বুকিং। কিন্তু, এবারের চিত্র একদমই আলাদা।
মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে সুমন বলেন, 'শুধুমাত্র প্রকৃতি দিয়ে পর্যটক নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। রাস্তাঘাট, ফুটপাত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।'
মৌলবীবাজারের সৌন্দর্য। ছবি: এখন টিভি
মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ বলেন, 'পর্যটক কমে যাওয়ায় শ্রীমঙ্গল থেকে কয়েকটি হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি হোটেলের হাতবদল হয়ে গিয়েছে।'
মৌলভীবাজার জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা মূলত পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নানান সংকটের কারণে প্রতিবছর কমছে পর্যটকদের আনাগোনা।
ব্যবসায়ীরা জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রের যথেষ্ট অভাব থাকায় এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। যার ফলে অর্থনৈতিকভাবেই প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। তারা বলছেন, যদি এই অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হয় তাহলে এই খাতে কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ আস্তে আস্তে আরও চরম সংকটে পড়বে।
এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সময় উপযোগী উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ ব্যবসায়ীদের।