ব্রাজিলে বেড়েই যাচ্ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করলেও তা পড়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিতসংখ্যক ভ্যাকসিনের ডোজ থাকায় এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই মারা গেছে ২শ' ১৪ জন।
রিও ডি জেনিরো'র স্বাস্থ্য সচিব ড্যানিয়েল সোরাঞ্জ জানান, 'ডেঙ্গু এখন আমাদের দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। দুই মাসে শুধু এই শহরেই ৫০ হাজার ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ডেঙ্গুর সব ধরনের প্রাদুর্ভাব দেশে দেখা গেছে। এই ধরনগুলো ব্রাজিলের মানুষকে সংবেদনশীল করে তুলছে'।
ডেঙ্গু মহামারিতে ৬ টি রাজ্য আর ১৭ টি শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মূলত যেসব এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেসব এলাকাতে টিকাদানের পরিকল্পনা করছিলো ব্রাজিল। আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ৬০ লাখ টিকা দেয়া হবে দেশটিতে। যা দিয়ে দেশের মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষকে টিকে দেয়া সম্ভব।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রেনাতো ফৌরি জানান, 'রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাকসিন বড় উপায়। কিন্তু আগামী ৫ বছরে আমরা ততো ডোজের টিকা পাবো না যতোটা আমাদের প্রয়োজন। যদি ৫ বছরে আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেই, তাও মাত্র ১৩ শতাংশকে টিকা দেয়া হবে। এভাবে দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব না।'
জলবায়ু পরিবর্তন আর তাপমাত্রা বাড়ায় দেশটিতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বর্তমানে নিকটবর্তী পেরু, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর ভিয়েতনামেও বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। আশ্চর্যজনকভাবে গেল বছর টেক্সাস, ফ্লোরিডা আর ক্যালিফোর্নিয়ায় সনাক্ত হয়েছে ডেঙ্গু রোগী।
ফেব্রুয়ারি থেকে জাপানের দুই ডোজের কিউডেঙ্গা ভ্যাক্সিনের প্রয়োগ শুরু করেছে ব্রাজিল। ইউরোপ, ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া আর থাইল্যান্ডে পাওয়া যাচ্ছে এই ভ্যাক্সিন। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজের পর এই ভ্যাক্সিন ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকরী।
জ্বর, শরীরে তীব্র ব্যথা, বমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু; ডেঙ্গু ডেকে আনতে পারে এমন ভয়াবহতা। ১৯৭০ সালে বিশ্বের মাত্র ৭টি দেশে দেখা দেয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০ বছরে প্রতি বছর ১০ থেকে ৪০ কোটি মানুষ সারাবিশ্বে আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। এখন তো বিশ্বের অর্ধেক মানুষই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছেন।