শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে,
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি।
নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়, সে দিন ছিল শ্রেষ্ঠ বিকেল। শ্রমিক, কৃষক থেকে নারী, প্রদীপ্ত যুবকের যে জনসমুদ্র তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকেই স্বাধীনতা শব্দটি বাঙালি নিজের করে নিয়েছিল।
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম পদক্ষেপ বলে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে দিনটি লেখা আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার সামনে স্বাধীনতার অঙ্গীকার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১ হাজার ১০৫ শব্দের ১৮ মিনিটের সেই ভাষণ, বাঙালিকে এনে দিয়েছিল জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করার প্রবল শক্তি।
বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বানের পর এ জাতিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রবল প্রতিরোধের মুখে মাত্র নয় মাসেই অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বাঙ্গালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল আর পাশাপাশি নিরীহ মানুষ হত্যায় লিপ্ত ছিল। সে সময় বঙ্গবন্ধু সারা বাংলায় অসহযোগ আন্দোলন ডাকেন। সে প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ডাক দেন এই ভাষণের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কাব্যিকতা, শব্দশৈলী, বাক্যবিনাসে ভরপুর ছিল।
প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘৭ মার্চ একটা জাতিকে পুরো নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে গিয়েছে। কারণ, জাতি বুঝে গিয়েছিল এই ডাক স্বাধীনতার ডাক। এ ভাষণে স্পষ্ট বাক্যে স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়েছিল। দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয় এ ভাষণে উঠে এসেছে।’
আপামর জনসাধারণ যেভাবে চেয়েছেন একটি দেশ হোক, একটি মানচিত্র হোক এবং আমাদের স্বাধীনতা হোক। এই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য যিনি দেবদূত হয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহাকাব্যিক সেই ভাষণেও ছিল বার্তা।
জাফর ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জেলা সদরে মিছিলের পর মিছিল শুরু হয়ে যায়। ঢাকা শহরের মিছিলগুলো শহীদ মিনার থেকে ধানমন্ডি-৩২ এ গিয়ে শেষ হতো।’
শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র আজ মানুষ চলছে তার আপন শক্তিতে, স্বাধীনতায়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা সর্বত্র মিলছে অধিকার। কাঠামোগত উন্নয়ন থেকে মানব সূচক উন্নয়নে অন্যের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে না। নদীর তলদেশে টানেল, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশ আজ পৌঁছে গিয়েছে মহাকাশ পর্যন্ত।
মহাকাব্যিক সেই ভাষণই যার আধার। যতদিন রবে বাংলাদেশ ততদিন এই মহাকাব্যের আবেদন থেকে যাবে বলেই মনে করেন ইতিহাস বিশ্লেষকরা।