বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আলুর ক্ষেত। তিন মাস জমিতে পরিচর্যা শেষে কৃষক এখন ব্যস্ত আলু উত্তোলনে। প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে এবার ফলন কিছুটা কম। এছাড়া বেশি দামে আলুর বীজ কেনা, একাধিকবার ওষুধ ছেটানো, সার-সেচ মিলে চাষের খরচও বেড়েছে। তাই ২০ টাকার নিচে আলু বিক্রি করলে লোকসান হবে, বলছেন চাষিরা।
আলুচাষিরা বলেন, 'আলুর খরচ বেশি, কীটনাশকের দাম বেশি, আলুর বীজের সংকট ছিলো, বীজের দাম বেশি।'
আরেকজন বলেন, 'গত সিজনের থেকে আলুর ফলন কম। বিঘা হিসেবে ৪০ থেকে ৬০ মণ হতো, সে হিসেবে এখন ২৫ থেকে ৩০ মণ হচ্ছে। ৬০০-৭০০ টাকা মণ আলু বিক্রি করলে তো হবে না, কৃষকের তো লোকসান গুনতে হবে।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলাকায় সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় উত্তোলন মৌসুমে অনেক ফসলের অপচয় হয়। এছাড়া একসাথে আলু ওঠায় এ সময় দামও কমে যায়। স্টোরেজ করার পর বাজারে আলুর সরবরাহ কমে গেলে আবার দাম বাড়ে। এছাড়া পরিবহনসহ হাট ইজারা খরচ বাড়ায় বছরের শেষেও বাড়ে দাম।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'কৃষকেরা সঠিকভাবে আলু সংরক্ষণ করতে পারে না। এটা যদি সরকার পদক্ষেপ নেয় কিছুটা হলেও সাশ্রয় পাবে।'
কৃষি বিভাগের তথ্যে, ৯০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গেল বছর আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৭শ' টন। তবে, উদ্বৃত্ত থাকার পরও কেন আমদানি করতে হল কেন? এমন প্রশ্ন হিমাগার মালিকদের। তাদের দাবি, লাভ লোকসান দুটোই দেখতে হবে সরকারকে।
হিমাগার মালিকরা বলেন, '২০২৩ এ কৃষকের বিষয়ে কোনো আলু ছিল না। সব আলু হিমাগারে চলে গিয়েছিল এই জন্য আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের হয়েছে।'
আরেকজন বলেন, 'খাওয়ার হিসেব ভুল আছে নাহলে পোডাক্টশন হিসেব ভুল আছে। সরকারের হিসেব তারতম্য কারণে ইম্পোর্ট হচ্ছে বা দাম বাড়তেছে।'
গত বছর অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলুর ব্যবহার বেড়েছিল। এছাড়া সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় অনেক আলুই নষ্ট হয়েছে। সেজন্য দর বাড়তি ছিল। তবে, এবার আলুর উৎপাদন বাড়ায় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে আশা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোতলেবুর রহমান বলেন, 'অন্যান্য সবজির পাশাপাশি আমরা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারবো এবং এবছর আমাদের আলুর একটা ভালো ফলন পাবো। এখানে আসলে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে দিকে।'
বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় এবার ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ লাখ টন বিভিন্ন জাতের আলু উৎপাদন হয়েছে, যার মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন।