বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী খোয়াই, যার উৎপত্তি ত্রিপুরা রাজ্যের আঠারমুড়া পাহাড়ে। এই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে। পরে জেলার তিনদিক দিয়ে ৯০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলেছে।
জেলার ৬টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগের অবলম্বন ছিল এই নদী। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নদীকেন্দ্রীক বাণিজ্য ও জীবনধারার গুরুত্ব কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের দখল-দূষণে এক সময়ের খরস্রোতা খোয়াই এখন প্রাণহীন।
স্থানীয়রা বলেন, ‘এই নদী অনেক গভীর ছিল, ভাঙনও বেশি হতো। এখন তো পানিই নেই।’
খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপারের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘এই নদীকে কেন্দ্র করে কৃষিকাজ হতো। কিন্তু এই নদী দিনের পর দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’
প্রবাহমান খোয়াই নদীর পলি মাটিতে যুগ যুগ ধরে আখের চাষ করে আসছেন চুনারুঘাট উপজেলার কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা। চলতি বছর জেলায় ২৯০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে, যার ৭০ শতাংশের বেশি চাষ হয়েছে খোয়াই’র দু'তীরে। তবে নদীতে পানি না থাকায় সেচ নিয়ে বিপাকে কৃষকরা।
খোয়াই নদী। ছবি: এখন
এদিকে অবৈধভাবে মাটি, বালু উত্তোলন ও পরিকল্পিত খননের অভাবে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘নদীতে গোসল করার পানিটুকুও নেই। আগে নদীতে পানি ছিল।’
অন্য সময়ের প্রাণহীন খোয়াই নদী বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। উপযুক্ত বাঁধ না থাকায় প্লাবিত হয় ফসলি জমি ও বসতভিটা। তবে খোয়াই নদী রক্ষায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যদিও দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে প্রকল্পটি।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুতই আমাদের কাজ শুরু হবে।’
খোয়াই নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা একটি 'গঞ্জ' থেকেই আজকের সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ। তাই ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাণ-প্রকৃতি আর কৃষি অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে খোয়াই রক্ষার দাবি জেলার বাসিন্দাদের।