নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য পাশাপাশি দুটি ওয়ার্ড। পুরুষ ওয়ার্ডে কোনমতে ভেঙে পড়া ছাদ ঝুলে আছে। বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলে না, রোগীর বিছানায় ধুলা-বালি, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে।
ট্রেনের চাকা ঘুরিয়ে দেশের যোগাযোগের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকায় যারা গতি আনেন। রেলওয়ের সেই শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবার কথা ছিলো। অথচ হাসপাতালটি এখন জরাজীর্ণ পড়ে আছে।
স্থানীয়রা বলেন, 'এখানে কিছুই হয় না। যদি এখানে চিকিৎসক দেয়া হয় তাহলে রেলের কর্মচারীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও চিকিৎসা সেবা পাবে।'
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসাসেবা দিতে ১৯১৭ সালে বগুড়ার সান্তাহারে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২২ থেকে শয্যা সংখ্যা কমতে কমতে এখন ১৩ তে ঠেকেছে। ইনডোর সেবা বন্ধ থাকায় তাও অকার্যকর।
প্রায় চার বছর ধরে কোন চিকিৎসক-নার্স নেই। এখানকার এক ফার্মাসিস্ট কোনমতে সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো সাধারণ রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। জরাজীর্ণ ভবন আর পরিত্যক্ত সরঞ্জাম নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রটি নিজেই এখন মৃত্যু শয্যায়।
লাকড়ি বোঝাই এই কক্ষ একসময় অপারেশন থিয়েটার ছিলো
চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন বলেন, 'এইখানে প্রেশারের ওষুধ পাই নাই, শুধু জ্বর আর গ্যাসের ওষুধ পাইছি। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিছু নাই। আমরা সেবা ঠিকমতো পাচ্ছি না। আমরা সান্তাহারের রেল কর্মচারীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।'
দুজন চিকিৎসক, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে পাঁচজন নার্স, একজন সিস্টার ইনচার্জ, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন লেডি হেলথ ভিজিটর, মিডওয়াইফ, স্যানিটারী পরিদর্শকসহ ৪৪ পদের ১২টি শূন্য রয়েছে।
সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট তানিয়া নাজনীন এখন টিভিকে বলেন, 'জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসলে তা দেখে ওষুধ দেয়া হয়। আর যখন জটিল সমস্যার রোগী হয় তখন ডিএমও (বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার) স্যারের সাথে কথা বলি। কারণ আমাদের এখানে তো সহকারী সার্জনের পদ শূন্য।'
পাকশি রেলওয়ে বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিল আহমেদ (মুঠোফোনে) বলেন, 'জনবল খুব সংকটের কারণে আমরা এখানে (সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতাল) ডাক্তার দিতে পারিনি। যে কারণে ইনডোর সার্ভিসটা আপাতত বন্ধ আছে। খোঁজ নিয়ে দেখবো আমার মেডিকেলের কি অবস্থা। যদি এরকম সমস্যা হয় তাহলে সমাধান করবো।'
বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতালের মূল ভবন, আবাসিক কোয়ার্টার, প্যাথলজি ভবনসহ পুরো অবকাঠামো প্রায় পরিত্যক্ত।