স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

শীত এলেই হাসপাতালে বাড়ে দগ্ধ রোগী

কনকনে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া উত্তপ্ত পানিতেও যারা পুড়ছেন তাদের অর্ধেকই শিশু।

প্রচন্ড শীতে বাবার জন্য গরম করা গোসলের পানিতে পড়ে গিয়ে শরীরের ১৭ শতাংশ পুড়ে যায় তিন বছরের এক শিশুর। যন্ত্রণার দীর্ঘ অধ্যায় শেষে শিশুটি এখন সুস্থতার পথে।

শিশুটির মা বলেন, 'গরম পানি বসিয়ে বাচ্চার জন্য দোকানে নুডলস আনতে যাই। এসে দেখি সে পাতিলের উপর পড়ে গেছে। মেঝে পিচ্ছিল থাকায় সে পড়ে যায়।'

শীত এলেই বাড়ে দগ্ধ রোগী। ২০২৩ সালজুড়ে আগুনে পুড়ে শুধু রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার রোগী। এরমধ্যে গরম পানিসহ উত্তপ্ত তরলে সবচেয়ে বেশি দগ্ধ হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, 'চুলা থেকে জামায় আগুন লেগে যায়। রান্না করতে গেছিলাম প্রথমে আঁচলে লাগে, আঁচল ফেলে দিলেও জামায় লেগে যায়।'

অক্টোবরে ৮৭০ জন দগ্ধ রোগীর ৫২৬ জন এবং নভেম্বরে ৭৬৪ জন দগ্ধ রোগীর ৪৫৬ জন গরম পানি, দুধ, ডালসহ উত্তপ্ত তরলে পুড়েছে। ভূক্তভোগীদের সিংহভাগই শিশু।

এছাড়াও আগুন পোহানো ও শীতকালে রান্নাঘরের জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাসের লিকেজ থেকে দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়তে থাকে। এমন অসংখ্য দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বার্ন ইনস্টিটিউটে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, 'যদি আমরা ৫ মিনিটের জন্য দরজা-জানালাগুলো না খুলে কাজ শুরু করি, তখন দেখা যায় একটা ম্যাচের কাঠিতে একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সম্প্রতি এরকম কিন্তু কেরাণীগঞ্জ, ফেনী এবং ঢাকাতে একাধিক হয়েছে।'

সমস্যা সমাধানে সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই বলছেন চিকিৎসকরা। সারাবছরই গরম পানি বা তরলের আশেপাশ থেকে শিশুদের সর্বোচ্চ দূরে রাখার পরামর্শ তাদের।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল বলেন, '৩০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেলে এবং তার সাথে যদি শ্বাসনালী আক্রান্ত থাকে তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে থাকে।'

পুড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে পোড়া অংশে সাধারণ পানি দিতে হবে। দ্রুত সুস্থতা বা মৃত্যু ঝুঁকি এড়াতে প্রথমে কাছের বড় হাসপাতাল ও পরে প্রয়োজনে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসার আহ্বান ইনস্টিটিউটটি'র পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়ালের।

তিনি আরও বলেন, 'প্রথম ৬ ঘণ্টা হচ্ছে গোল্ডেন আওয়ার। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব। সেখানের ফলাফলও ভালো।'

শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে শিশু ও নারীদের ৩৬ শয্যার এইচডিইউতে গত ৩ মাসে মারা গেছে ৪৭ জন। যাদের সিংহভাগই শীতজনিত অগ্নি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এখনও যারা ৫০ শতাংশের বেশি অগ্নিদগ্ধ তারা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তাদের সিংহভাগ শীতজনিত দুর্ঘটনার শিকার। শুধু সচেতনতার মাধ্যমে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।