জীবনযাপন
0

শহুরে যান্ত্রিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী শৈশব

গ্রামের শৈশব কাটে সবুজে, মাঠে, খেলাধুলায়। ছুটির দিন কাটে উল্লাস আর ছোটাছুটিতে। তবে শহরে নেই সেই সুযোগ। ছুটির দিন আর অবসর কাটে ঘরবন্দি কিংবা কৃত্রিমতায়।

গ্রামে শিশুদের ছুটি মানে বাড়ি ফেরার তাড়া। উঠানজুড়ে কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ। নেই সময়ের বাঁধা, করে না কেউ শাসন-বারণ। দেয়া যায় বৌছি, কড়ি, ধাপ্পা, দড়িলাফে হাজিরা। পড়শীর সাথে সখ্যতা বাড়ার সময় বুঝি এখন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'কুতকুত, এলোন্টি-বেলন্টিসহ নানারকম খেলা খেলি। বাসায় পিঠা বানায়, সবাই মিলে পিঠা খাই। ছুটির দিনে সবাই বেড়াতে আসে। খুব মজা করি।'

দুপুরে দলবেঁধে ডুবসাঁতার আর উল্লাসের পর বিকেলে ফুটবল মাঠে বন্ধুদের তুমুল লড়াই। গোল্লাছুট, ঢাংগুলি, মারবেল কিংবা লুকোচুরি। মোট কথা মাঠে থাকা চাই।

শিশুরা জানায়, বিকাল হলে সবাই মাঠে আসে, একসাথে খেলাধুলা করে। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌বাড়ির পাশে মাঠ হওয়ায় খেলতে ভালো লাগে।

পানিতে ঝাপাঝাপি করছে গ্রামের শিশু-কিশোররা

অন্যদিকে শহরে পাখির চোখে যেমন চেনা যায় না আপন বাড়ির ছাদ। তেমনি দেয়ালের পাশের প্রতিবেশীরও মেলে না খোঁজ। তাতে শৈশবের ছুটির দিন কাটে ঘরবন্দি। এখানে স্কুল ছুটি হলেও, বাবা মায়ের কাজের ছুটি হয় না। তাতে অবসরেও যাওয়া হয় না মাঠে।

তবে উন্মুক্ত খেলার মাঠের স্বল্পতায় শিশুপার্ক ছাড়াও গড়ে উঠেছে ইনডোর গেমসের প্রতিষ্ঠান। যেখানে এক ছাদের নিচে থাকে কয়েকটি খেলার ব্যবস্থা। শিশুদের বিকাশে তাই অভিভাবকদের ভরসা রাখতে হয় ইনডোর গেমসে।

অভিভাবকরা বলেন, 'ওই শৈশবটা আমরা এখনকার বাচ্চাদের দিতে পারি না। প্রকৃতির সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি না বলেই ইনডোর গেমসে নিয়ে আসা।'  

শিশুদের ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা থাকলেও কিশোরদের জন্য সেটুকুও নেই। যে কয়েকটি মাঠ রয়েছে সেগুলোও সংরক্ষিত। কিশোরদেরকে মাঠে ফেরানোর লক্ষ্যে কয়েকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। তরুণদের চাওয়া, বাণিজ্যিকভাবে হলেও মাঠের সংখ্যা বাড়ুক। তারা জানায়, 'টার্ফ হওয়াতে আমরা খুবই খুশি। আগে তো পুরান ঢাকাতে এই সুবিধা ছিলো না। এখন সুবিধা হয়েছে।'

যান্ত্রিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী শৈশব আর মূল্যবোধ। যেখানে প্রকৃতি হতে পারতো আমাদের বড় শিক্ষক।

শিক্ষক ও অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, 'শৈশবকাল এমনভাবে উপভোগ করেছি যে এখন খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। যান্ত্রিক জীবনটা আমাদের রাক্ষসের মতো গিলে ফেলছে। শুধুমাত্র প্রকৃতির কাছে গেলেই আমরা সকল কষ্ট ভুলে যেতে পারি।'

শৈশব কাটুক উল্লাসে। আগামী বেড়ে উঠুক প্রকৃতির প্রাণে।