বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় দু'বছর ধরে ডলার সংকটের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আমদানি বেড়ে যাওয়া ও রেমিট্যান্সের উত্থান-পতনে গত ১ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া প্রতি কার্যদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে গড়ে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে।
এই সংকটময় মুহূর্তে লাগামহীন হয়ে দফায় দফায় বাড়তে থাকে ডলারের দাম। কার্ভ মার্কেটে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, বেশি দামে বিক্রিতে ব্যাংকগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতাসহ নানা অস্থিরতা তৈরি হয় ডলারের বাজারে। পরে একের পর এক সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসে ডলারের বাজার।
ডলার বিক্রির তথ্য। ছবি : এখন টিভি
এরপরেও ব্যাংকগুলো একক দরে ডলার কেনা-বেচা করলেও কার্ভ মার্কেটের সঙ্গে দামের বড় পার্থক্য থেকে যায়। ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞদের মতে ডলারের দাম ঠিক রাখতে কার্ভ মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংকের দামের পার্থক্য ১-২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
এদিকে গত কয়েক মাসে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর তিন দফায় ১ টাকা কমানো হয় ডলারের দাম। এরপর সংগঠনটির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ডলারের দাম নির্ধারণে 'ক্রলিং পেগ' সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের দাম। ছবি : এখন টিভি
'ক্রলিং পেগ' হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। যেখানে নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ মুদ্রাকে করিডোরের মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার সমমূল্য এবং হারের করিডোর সমন্বয় করা হয়।
তবে এখনি এ পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারত বা অন্যান্য দেশগুলো থেকে এ বিষয়ে জেনে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে চালু করা হবে ক্রলিং পেগ।
একেবারে খোলাবাজারের উপর ডলারের দাম ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণে ও বাজার সমন্বয়ে এ পদ্ধতি চালু করা হবে।
ক্রলিং পেগের বৈশিষ্ট্য। ছবি: এখন টিভি
তবে এ পদ্ধতি চালু করলেও ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর বা খোলা বাজারে ডলারের দাম ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
আশা করা যাচ্ছে নতুন এ পদ্ধতিতে ডলারের দামে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে চালু হচ্ছে না নতুন এ পদ্ধতি।