দেশে এখন , গ্রামীণ কৃষি
কৃষি
1

লাইট ইনডোর্স পদ্ধতিতে ড্রাগনের ফলন বেড়েছে ৩ গুণ

ঝিনাইদহে ড্রাগন চাষে এক অবিশ্বাস্য কৃষি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে।

পান, কলা, ধানসহ সবজিই এখানকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি, তবে এর সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্ত হয়েছে দেশী-বিদেশী ফুল ও ফলের চাষ। ফলের মধ্যে কলা, আম, কাঁঠালের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে বেশী চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফলের। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এখানে ড্রাগন ফলের চাষ বেড়েছে ৮ গুণ।

এবার অভিনব পদ্ধতিতে বিপ্লব জাহান নামের এক সৌখিন কৃষক জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলাতে অসময়ে ড্রাগন ফলের চাষে নেমেছেন। তিনি লাইট ইনডোর্স পদ্ধতি ব্যবহারে স্বুসাদু ড্রাগনের ফলন বৃদ্ধি করেছেন। তার চাষ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে।

এই উপজেলার চারাতলা ড্রাগণ ফ্রুটস এন্ড এগ্রোর মালিক কৃষক বিপ্লব জাহান জানান, তিনি ইউটিউব দেখে লাইট ইনডোর্স পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হন। এই পদ্ধতিতে মূলত রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হয়, রাতকে দিন বানিয়ে রাখার মতো অর্থাৎ রাতেও দিনের আলোর মতো আলোকিত করে রাখতে হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা ও রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ৯ ঘন্টায় দুইদফা লাইটগুলো জ্বলে। শীতকালে দিন ছোট হয়ে আসে তাই দিনের আলো কম হয়। আমাদের দেশে চাষ হওয়া ড্রাগন ফল বাগান বেড়ে ওঠে মুলত দিনের আলোয়, তাই এমন পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগনের গাছ ও ফলের বেড়ে ওঠা সঠিক- স্বাভাবিক বা ন্যাচারাল থাকে বলে তিনি জানান।

বিপ্লব জাহান তিন বছর আগে চারাতলা গ্রামের মাঠে ১১ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন ড্রাগন ফলের বাগান। তার বাগানে ৩৩ হাজার ড্রাগনের গাছ রয়েছে। চীন থেকে বিদ্যুত সাশ্রয়ী দুই হাজার ৮০০ এলইডি লাইট এনে লাইট ইনডোর্স পদ্ধতি চালু করেন।

গতবছর তিনি শীত মৌসুমে বিক্রি করেছেন ৩০ লাখ টাকার ড্রাগন। নিয়মিত ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই ড্রাগন। এবছর তার বাগান থেকে ৫০ হাজার মেট্রিকটন ড্রাগন উৎপাদন হবে বলে আশা তার।

জেলার ৮৪২ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে, যেখান থেকে মৌসুমে উৎপাদন হচ্ছে কমপক্ষে ৫৩৮ কোটি টাকার ফল। জেলার মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর সারাদেশে একমাত্র ড্রাগন গ্রাম হিসাবে খ্যাত। এরসাথে গৌরীনাথপুরকে ফলের রাজ্য বা ড্রাগনের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার, সপ্তাহের ৭ দিনের এই বাজারে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ঝিনাইদহের ১০০ চাষী চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দুবাইয়ে ফল রপ্তানীতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলায় ২৬ হাজার ৯৪৪ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে। টাকার হিসাবে ২০০ টাকা কেজি দরে একটন ড্রাগন ফলের দাম দুই লাখ টাকা। আর উৎপাদিত ২৬ হাজার ৯৪৪ টন ড্রাগন ফলের বাজারমূল্য ৫৩৮ কোটি টাকার ওপরে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলাতে ২১৬ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৩০০ হেক্টর ও মহেশপুর উপজেলাতে ২৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল।

এমএসএ

আরও পড়ুন:

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর