পেঁয়াজে একদিনে বাড়তি খরচ ৭৭ কোটি

শাহনুর শাকিব
ঢাকা
0

পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ায় শুধুমাত্র একদিনে ভোক্তার পকেট থেকে কাটা গেল ৭৭ কোটি টাকা।

'চড়া দামের উনুনে' চড়ে বসা পেঁয়াজের সারা দেশের দৈনিক চাহিদা হিসাব করে মিলেছে এমনই বিরাট অঙ্ক। এই খরচ কমানোর যে উপায়; সেটি বিকল্প দেশ থেকে আমদানি। কিন্তু তাতেও সময় লাগবে অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ দিন। আবার ডিসেম্বরের শেষদিকে ভরা মৌসুম পেঁয়াজের, তাই আপাতত ঝুঁকি নিতে চাইছে না আমদানিকারকরা।

লোকসানের হিসেব আর ভারতে আটকে পড়া পেঁয়াজের পরিশোধিত অর্থ কীভাবে ফেরত পাবেন তারই পথ খুঁজছেন পেঁয়াজ আমদানিকারক শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী নজরুল চৌধুরী। হুট করে পেঁয়াজ নিষেধাজ্ঞায় ভারতের পোর্টে আটকা পড়েছে অন্তত ৯০ টন পেঁয়াজ। ৪৫ রুপি কেজি দরে কেনা পেঁয়াজ এখন না পাড়ছেন দেশে আনতে আর না পারছেন বিক্রি করতে। কারণ ভারতে পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছে ২০ রুপিতে।

নজরুল বলেন, 'গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যার পর ভারতে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ২০ রুপিতে নেমে এসেছে, এক থেকে দুই দিনের ভিতরে ১০ রুপিতে নেমে যাবে। আমার ৪৫ রুপি করে কেনা ছিল। সব টাকা লস আমার, দেশে আনতে পারছি না, আর ভারতে বিক্রি করতে হলে ১০ রুপি করে বিক্রি করতে হবে।'

ভারতের পেঁয়াজ নিষেধাজ্ঞায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে শ্যামবাজারের অধিকাংশ পাইকারী আরত।

|undefined

সরকারি হিসেব বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫ লাখ হলেও পেঁয়াজ পঁচে যাওয়ার কারণে আমদানির প্রয়োজন হয় ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিকটন। আর এই ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা রাখে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এর পাশাপাশি ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন সময়ে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা হলে মান নিয়ে বরাবর প্রশ্ন ছিলো ভোক্তার।

আমদানিকারক মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'ইতিমধ্যে চায়না থেকে পেঁয়াজ এসেছে, পাকিস্তান থেকেও আনার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু তা সময় সাপেক্ষ। আমরা ব্যবসায়ীরাও একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে গিয়েছি। জনগণের এ ভোগান্তি লাঘবের বিষয়টি এখন সরকারের দেখা উচিত।'

অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি আপাতত সংকট সমাধানের পথ নয় বলে মন্তব্য ব্যবসায়ীদের। কারণ হিসেব পেঁয়াজের মৌসুমকে সামনে নিয়ে এসেছেন তারা। বলছেন, পেঁয়াজ আমদানির সময়ের কারণে আপতত ঝুঁকি নিতে চাইছে না ব্যবসায়ীরা।

|undefined

ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন , 'পুরান পেঁয়াজ শেষে নতুন পেঁয়াজের আগমন হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাঝে কয়েকদিন সময় রয়েছে। আর এ সময়ে ভারত সুযোগ নিয়ে এলসি বন্ধ করে দিয়েছে।'

বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ মেট্রিকটন। দিনের হিসেবে ৭,৬৭১ মেট্রিক টন। রাতারাতি দিগুণ হওয়া পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা দিয়ে গুণ করলে দাঁড়ায় ১৫৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যার অর্ধেক ৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ভোক্তাকে বাড়তি গুনতে হয়েছে মাত্র ১ দিনে। যদি এই দাম ২০ দিনও থাকে তা হলে ভোক্তার পকেট থেকে উড়ে যাবে ১ হাজার ৫০০ কোটি ৩৪ লাখের বেশি টাকা।

২০১৯ সালে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় রাতারাতি ২৫০ টাকার ঘর ছুঁয়েছিলো পেঁয়াজের দাম। তখন এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি গবেষণা হয়েছিলো। সেখানে পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো, সংরক্ষণ ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে কঠোর হাতে দমনের।

৪ বছরেও এই পরামর্শ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে এখন বিকল্প হিসেবে এ গবেষক দেখছেন মৌসুমের জন্য অপেক্ষা, আর অন্যদেশ থেকে আমদানি। তবে পেঁয়াজের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙার পরামর্শ তার।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, 'বিকল্প পথ অনেক আছে। আমরা সবসময় ভারতের উপর নির্ভর করে থাকি না। ভারতে না পেলে পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা করা হয়। এবছরের সমস্যা সমাধানে দ্রুত আমরা এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করতে পারি।'

পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করলে সিন্ডিকেটের পাতানো জালে তারাই ধরা খেতে পারে মনে করেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। দাম বৃদ্ধির কথা শুনে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পেঁয়াজ না কিনতে যাওয়ার পরামর্শও তাদের।

এসএস