বিয়ের মৌসুমে অপেক্ষায় থাকলেও নিমন্ত্রণ মিলছে না রাজধানীবাসীর। বিয়ের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ করার পরও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তারিখ পেছাতে হচ্ছে বর-কনের পরিবারকে। কেউ কেউ আবার এই পরিস্থিতিতে, বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন নিতে নারাজ।
অর্থ যোগের বৈরি হাওয়া থাকলেও বিয়ের ফুল ফোটা বন্ধ থাকছে না। তবে ফুল প্রস্ফুটিত হবার উদযাপনের বাদ্য বাজনায় হাতটান পড়েছে। অতিথি আপ্যায়নসহ বর-কনের সাজ-অলংঙ্কারে কাঁচি পড়েছে। ছোট হচ্ছে বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতার ফর্দ।
তবে কোন কোন পরিবারের বিয়ে ষোলআনা জৌলুস নিয়েই হচ্ছে। কিন্তু ব্যতিক্রমতো অর্থনীতির চাকার জ্বালানি যোগায় না। তাই এবারের বিয়ের মৌসুমকে মন্দ হাওয়াই বলা যায়। এই হাওয়া কোন কোন কলিকে ফুটতেও দিচ্ছে না। খরচের কথা ভেবে, ফুল ফুটতে সময় নিয়ে নিচ্ছে বিয়ের কলি।
এ ব্যাপারে পরিবারগুলো বলছে, হরতাল-অবরোধের মধ্যে হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। কাবিন হয়ে আছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের বিক্রি বেশি হলে লাভ কম হলেও পোষাণো সম্ভব। কিন্তু হরতালে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। যেকারণে বিয়ের পোশাকগুলো বিক্রি করতে পারছেন না।
বিয়ে উৎসবের রঙধনুর এক রঙ নিমন্ত্রণ পত্র। সেই নিমন্ত্রণ পত্র নিয়েও মাতামাতি কমেছে। এ বিষয়ে কার্ড বিক্রেতারা বলছেন, এখন সবাই অনলাইনেই বিয়ের দাওয়াত দিয়ে দেয়। কার্ডের চাহিদা অনেক কমে গেছে, বাজার খুবই খারাপ।
কাজী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলাকাভিত্তিক হারে বিবাহের এই মৌসুমে শুক্রবারে গড়ে দশ-বারোটা বিয়ে হতো। আর এখন একটা কি সর্বোচ্চ দুইটা বিয়ে হচ্ছে।
রাজধানীর কমিউনিটি সেন্টার কিংবা কনভেনশন হলগুলোতেও একই হাল। কনে তাই কোনো পার্টি সেন্টার নয় নিজের ঘর থেকে বিদায় নিয়েই নবযাত্রা শুরু করছেন বরের বাড়িতে।
প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারের সাধারণ ব্যবস্থাপক মো. হেলাল মিয়া বলেন, অবরোধের কারণে মানুষ ছোট পরিসরে বাড়িতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছেন। কমিউনিটি সেন্টারে কেউ আসছে না।
বিয়ের ফর্দের সাথে জড়িয়ে আছে এমন আরও অনেক খাত। সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া যেনো এখন নিরুপায় সেসব খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিয়ে এখন বাঙালির কাছে এক উৎসব। যে উৎসবের শুরু হয় শীতকাল অর্থাৎ নভেম্বর মাস থেকেই কিন্তু ২০২০ সালে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যেনো আবারও হোঁচট খাচ্ছেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এ বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিয়ের দিন তারিখ পিছিয়ে নেয়ার কথা কিংবা ঘরোয়া বিয়ের আয়োজনে লাভ ক্ষতির হিসেবে ক্ষতির অংকই বেশি গুণছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিবাহের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা বর-কনের আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী হতে না পারার আফসোস থেকে যাচ্ছে পরিবারগুলোর।