সরুয়া
জীবনযাপন
ঢাকায় চাকমা খাবার
চাকমাদের খাদ্যাভ্যাস

চাকমাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে প্রকৃতির যেন এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। ঋতুভেদে প্রকৃতি যেভাবে বদলায় তেমনি পাল্টে যায় তাদের খাদ্যতালিকা। আবার রান্নায়ও ব্যবহার হয় প্রকৃতিরই বিভিন্ন উপাদান। এসব খাবারের রান্নার প্রক্রিয়াও বেশ বৈচিত্রময়। হেবাং চাকমা শব্দ। যার অর্থ ভাপে রান্না করা বা স্বেদ্ধ করা। পাহাড়ি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে হালকা মশলা আর অল্প তেলেই সচরাচর রান্না করতে ভালবাসেন চাকমারা। তাদের সেসব খাবার ও রান্নার কৌশল জানাবো আজ।

তুলশীমালা চাল দিয়ে তৈরি চিকেন বিরিয়ানি, চাকমাদের প্রিয় একটি খাবার। চালের সুগন্ধেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে রান্নার খাবর! সঙ্গে যখন যোগ হয় পাহাড়ি মুরগি আর রান্নাটা হয় বাশে তখন স্বাদ কেমন হতে পারে সহজেই আন্দাজ করা যায়। চাকমাদের খাদ্য তালিকায় ঋতুভেদে বদল ঘটতে দেখা যায়, যেমন, বর্ষা মৌসুমে তাদের খাবারের তালিকায় স্থান পায় বাশকোড়ল। নানা পদ তৈরি হয় এটি দিয়ে। কখনো ভাজি আবার কখনো যোগ হয় ঝাল মসলার পুর। বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ী ঝর্না অথবা জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা হয় শামুক, যা রান্না করা হয় সিদলের ঝোলে। এই সিদল তৈরি করা হয় মূলত সামুদ্রিক মাছ শুটকি করে। যাকে চাকমা ভাষায় বলা হয় নাপ্পি। যার সুস্বাদ এখন পাহাড় ছাড়িয়ে সমতলেও।

ডিম হেবাং। ডিমের এক বিশেষ চাকমা রেসেপি। মশলা আর ডিম খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে ভাপে তৈরি করা হয় ডিমের এই পদ। ফলে স্বাদেও আসে ভিন্নতা। তাবা সবজি যে মৌসুমে যে সবজি সহজ লভ্য তা দিয়েই রান্না হয় এই পদটি। বেশিরভাগ সময়েই ব্যাবহার হয় পাহাড়ী চিচিঙ্গা। এর বিশেষত্ব হচ্ছে রান্নার সময় সাধারণত তেলের ব্যবহার হয় না। সিদল মেশানো পানিতে হাল্কা সেদ্ধ হয় সবজি। চুকাই ফল যার ইংরেজি নাম রোসেলা। রঙ চায়ের মাঝে রোসেলা দিয়ে তৈরি করা হয় রোসেলা চা। এই চায়ের স্বাদ অনেকটা তেতুল টকের মত। চা প্রেমিদের কাছে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও বড়া পিঠা চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই পিঠা দিয়েই তারা অতিথি আপ্যায়ন করে থাকে। হলুদ ফুলের ভর্তাও তাদের প্রিয় খাবারগুলোর একটি। আর মিষ্টান্নে থাকে বিন্নি চালের পায়েস। ষড় ঋতুর দেশে প্রকৃতির রঙ্গে যেমন বদল আসে তেমনি বদল আসে চাকমাদের খাবারেও।

এমএম
আরও পড়ুন: