মাঠ-ঘাট ও বাড়ি-ঘরে কৃষাণ-কৃষাণীর ব্যস্ততা। জলাশয়ের বুক চিরে গড়ে ওঠা গ্রামীণ জনপদ ও কাঠের সাঁকোতে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্যই দেখছে একদল শিশু ও তাদের অভিভাবক।
চিত্রটি একদম জীবন্ত মনে হলেও ক্যানভাসে রঙ তুলি দিয়ে আঁকা এ ছবিটি জাপানের কিংবদন্তি শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই-এর। ১৭৬০ সালে জন্ম নেয়া বিখ্যাত জাপানি শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো এমন জীবন্ত করে তুলতে ছোঁয়া লেগেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। অন্তত ২০০ বছর আগের ছবিগুলো দেখে জাপানের সামুরাই যুগের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। ডিজিটাল ক্যানভাসে জাপানের সাংস্কৃতিক অতীত রোমন্থনে খুশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
পর্যটকদের একজন বলেন, ‘আমি শিল্পকর্ম দেখতে খুব ভালোবাসি। এখানে আমার বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এসে ডিজিটালি কিংবদন্তি শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই-এর চিত্রকর্ম দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
আরেকজন বলেন, ‘প্রথমে মনে হচ্ছিল আমি কেঁদে দেবো। আমার কাছে এটা খুব ভালো লেগেছে। এটা সত্যিই অসাধারণ।’
টোকিওর এই প্রদর্শনীতে ভিজ্যুয়াল শিল্পী হিরোকি ইনো কুচি ছবিগুলোকে জীবন্ত করে তুলতে ব্যবহার করেছেন ডিজিটাল চিত্র সংস্থা আরস টেকনের জাদুকরী প্রিন্টের ওয়াশি পেপার টেক্সচার এবং সনি পিসিএল দ্বারা তৈরি হ্যাপটিক প্লেট।
'রেড' কোম্পানির ভিজ্যুয়াল শিল্পী হিরোকি ইনোকুচি বলেন, ‘শুধু শিল্পকর্মটি দেখানোর ধারণা থেকেই নয় বরং ছবিগুলো যাতে বাস্তব জিনিসের অভিজ্ঞতা দেয় তা করাই ছিল মূল লক্ষ্য। শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে গেছেন। তাই, আমার মনে হয় যদি তিনি এই প্রদর্শনীটি দেখতে পেতেন তাহলে অনেক খুশি হতেন। এমনকি তিনি যদি এই যুগে জন্ম নিতেন তাহলে হয়তো এই প্রদর্শনীর চেয়েও আরও ভালো কিছু করে দেখাতেন। তিনি এমন একজন শিল্পী ছিলেন যা অনুপ্রেরণায় আমরা কাজ করি।’
১৮৪৯ সালে জাপানের কিংবদন্তি শিল্পী কাৎসুশিকার মৃত্যুর পর তার ছবিগুলো ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের মতো চিত্রশিল্পীদেরও অনুপ্রাণিত করাও অনন্য ইতিহাস।
পুরোনো ছবি দিয়ে টোকিও প্লাজায় আয়োজিত অত্যাধুনিক এই আয়োজন পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে চলবে আগামী পহেলা জুন পর্যন্ত। এমন অবাক করা আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটক আনাগোনা বাড়িয়ে জাপান নিজ মুদ্রা ইয়েনের মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এগুচ্ছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।