রোববার (২৫ মে) উপকূলে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সঙ্গে ভারি বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা।
বরিশালে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় ফসলি জমি, সড়ক আর বাড়িঘর। কিছু এলাকা থেকে পানি নামলেও এখনো ডুবে আছে আউসের বীজতলা। পানির ওপর কিছুটা জেগে থেকে অস্তিত্ব ও অসহায়ত্বের জানান দিচ্ছে পুঁই, ঢেরস, চিচিংঙ্গা ও বাড়তে থাকা পাটের চারা। এমন অবস্থায় দিশেহারা হাজারও কৃষক।
তারা বলেন, চারা সব পানির তলে। ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টির কারণে আমাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পাটশাক, পুঁইশাক, ঢেরস সব এখন পানির নিচে। পানি যদি না নামে তাইলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। সংসার-সন্তান নিয়া আমাদের চলতে খুব কষ্ট হইবে।
দ্রুত পানি নামলে কমতে পারে ক্ষতির পরিমাণ। তা না হলে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে যাবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো ১২ হাজার হেক্টরের মতো। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা কৃষকের পাশে সবসময় আছি। তাদেরকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করছি।'
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার একই অবস্থা। আউসের বীজতলা, সবজির পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ফসল ও পানের বরজ।
কয়েক দশকে ঘূর্ণিঝড়ে একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলের কৃষি। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকের ওপর। তাই কৃষির প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে ভর্তুকির পাশাপাশি প্রণোদনা দেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান রিফাত ফেরদৌস বলেন, 'কৃষক ঋণের কারণে যেন জর্জরিত না হয়ে যায় সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে তারা এ কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তাই সরকারের উচিত তাদের ক্ষতি নিরুপণ করে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা।'
এবার বিভাগে চার হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ছিলো আউশের বীজতলা। যা দিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। এছাড়া ৪৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ছিলো নানা ধরনের শাক ও সবজি। যার বেশিরভাগ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।