শ্রমিকের পায়ে দোল খাচ্ছে তুলার বীজ। রোদে শুকিয়ে যা উপযোগী হয়ে ওঠে তেল উৎপাদনে।
শুরুতে চাষিদের উৎপাদিত তুলা কিনে নেন জিনাররা। পরে জিনিং মেশিনের সাহায্যে তুলা থেকে আঁশ ও বীজ আলাদা করা হয়। বীজ থেকে ক্রুড অয়েল ও খৈল বের করা হয় মেশিনে পিষে।
মেসার্স এমএম জিনিং মিলসের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বীজ থেকে তেল ও খৈল হচ্ছে। ক্রুড ওয়েল বর্তমানে ৯০ টাকা কেজি হিসেবে এবং খৈল lsgd হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’
ভোজ্য তেল তৈরির প্রাথমিক ধাপে কুড ওয়েল নিয়ে আসা হয় কটন ওয়েল মিল রিফাইনারিতে। মটরের সাহায্য তোলা হয় নিউটিলাইজারে। যেখানে আলাদা হয় দূষিত অংশ। পরিবর্তন আসে রঙে।
কটন ওয়েল মিল কেমিস্ট মো. মতিন সরকার বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাতকরণের সকল কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা একটা স্যাম্পল টেস্টের জন্য পাঠাই। টেস্টে উত্তীর্ণ হলে তবেই আমরা সেটা বাজারজাত করে থাকি।’
শুধু কুষ্টিয়াতেই রয়েছে দশটি জিনিং ফ্যাক্টরি। যেখানে তুলার বীজ থেকে ক্রুড অয়েল ও খৈল উৎপাদন হয়ে থাকে। বছরে এসব মিলে কয়েক হাজার টন তেল উৎপাদন সম্ভব।
রাসেল জিনিং ফ্যাক্টরি মালিক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে তুলার তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে সে অনুযায়ী কাঁচামালের উৎপাদন না হওয়ার কারণে আমরা বাজারে ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না। আর শ্রমিকদের চার থেকে পাঁচ মাস কাজ করানোর পর ১২ মাসের বেতন দিতে হয়।’
তুলার বীজে ১৮ ভাগ তেল রয়েছে। বাকি অংশ হয় খৈল। ভোজ্য তেল তৈরি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপের উচ্ছিষ্ট অংশ ব্যবহার হয় সাবান তৈরিতে।
এ তেল গুণে-মানে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কম কোলেস্টরেলযুক্ত বলছে- বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বিসিএসআইআর। ব্যতিক্রমী এই ভোজ্যতেলে বাণিজ্যিক রূপ দিতে সদিচ্ছা প্রয়োজন.বলছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
চুয়াডাঙ্গা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ বলেন, ‘তুলা এমন একটি ফসল যার কোনো অংশই ফেলনা নয়। তুলার উৎপাদন বাড়লে পশুর খাদ্য খৈলের জোগান হবে এবং তেলের চাহিদাও পূরণ করতে পারবো।’
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফখরে আলম ইবনে তাবিব বলেন, ‘এই তেল উৎপাদনে যে পরিমাণে কাঁচামাল দরকার সেই পরিমাণে কাঁচামাল আমাদের হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এই তেল আমেরিকা ও পাকিস্তানি সেনাদের খাওয়ানো হয়। ভারতের গুজরাটে সয়াবিনের থেকেও ১৪ টাকা বেশিতে এই তেল বিক্রি হয়।’
এন্ড পিটিসি এভাবেই নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তুলার বীজের তেল খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে। যদিও বছরের তিন থেকে পাঁচ মাস এ ধরনের মিলগুলো সচল থাকে। এর অন্যতম কারণ কাঁচামালের সংকট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে এ ধরনের মিলগুলো সারাবছরই সচল রাখা সম্ভব।