পাকা ধানের সোনালি রঙে ছেয়ে গেছে বগুড়ার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এলাকার কিষাণ-কিষাণী ব্যস্ত ঘরে নতুন ধান তোলায়। অনেক কৃষক সংসারের খরচ মেটাতে জমি থেকে ধান কাটা-মাড়াই করেই বাজারে বিক্রি করছেন। তবে বাজারে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু, প্রয়োজন মেটাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে ধান বিক্রি করছেন কৃষক।
কৃষকদের একজন বলেন, 'মোটা ধান সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ১২শ' টাকা। কিন্তু আমাদের চিকন ধান এখন ১১শ' টাকা বিক্রি করছি। তাহলে আমাদের কিভাবে লাভ হয় সব জিনিসের দাম এখন বেশি। সার, ধান কাটা, মাড়াইয়ের দাম বেশি।'
আরেকজন বলেন, 'বাধ্য হয়ে এখন ধান বিক্রি করছি। সংসার চালাতে হবে, কৃষক শ্রমিকদের টাকা দিতে হবে। সব কিছুর দাম বেশি। এতে লাভ থেকে লোকসানই বেশি হবে।'
সরকারি গুদামে ধান দেয়া নিয়েও কিছুটা বিপত্তি দেখা দিয়েছে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায়। ধান কেনার কথা বলা হলেও মোটা-চিকন ধান-চাল নিয়ে সরকারের নির্দেশনা নেই। বগুড়ায় মোটা ধানের আবাদ কমে যাওয়ায় এবং চিকন ধানের দাম বেশি হওয়ায় নির্ধারিত দামে ধান পাচ্ছে না সরকার। এতে মিলাররাও পড়েছেন বেকায়দায়।
মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সাথে চালের দামে সমন্বয় হয়নি। চালের দাম নির্ধারণেও তাদের কাছে পরামর্শ নেয়া হয়নি। ফলে এবার তাদের লোকসান গুণতে হবে। এতে করে দিনের পর দিন লোকসানে মিল ও চাতাল কমে যাচ্ছে। চালের মূল্য বাড়ানোর দাবি মিল মালিকদের।
মিল মালিকদের একজন বলেন, 'ধান ৩২ টাকা কেজি আর চাল সেখানে ৪৫ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু ৩২ টাকা করে কিনে চাল করলে সেখানে দাম হবে ৫১ টাকা এক্ষেত্রে ৪৫ টাকায় চাল দিলে আমাদের লোকসান হবে। আমরা দিতে পারবো না সরকারকে।'
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, 'বাজারের চাহিদা ও মানুষের যে পছন্দ সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমাদের কৃষকরা ভালো বাজার মূল্য পান সেজন্য তারা চিকন ধান চাষাবাদে আগ্রহী।'
গত বোরো এবং আমন মৌসুমে সরকারের দেয়া চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে বগুড়া খাদ্য বিভাগ। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজি দামে ধান এবং ৪৫ টাকা কেজিতে চাল কিনবে। ধান কেনার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকলেও, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা খাদ্য বিভাগের।
বগুড়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির বলেন, 'বর্তমান বাজার দাম যে পর্যায়ে রয়েছে। আমরা ধান ও চালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবো।'
৭ মে থেকে সরকার বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহ শুরু করেছে। এ বছর সারাদেশে কৃষকের কাছ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন ধান, মিল মালিকদের কাছ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করবে। আর বগুড়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৬শ' ৫২ মেট্রিক টন ধান এবং ৫৫ হাজার ৪শ' ৩৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের।
বগুড়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।